পোড়া কাপড়ের পরতে পরতে নিশ্চুপ থাকা গল্পগুলো
থেমে গেছে চিরতরে, আর কোনদিন তারা জাগবে না;
পোড়া শার্ট-প্যান্ট-পাজামা-সালোয়ার, ব্লাউজ
জমে থাকা নানা বর্ণের নানা আকারের স্যুটগুলো
নির্বাক তাকিয়ে আছে, পোড়া পোড়া পরতের একচিলতে
জানালার ভিতর দিয়ে, অপলক-অসহা্য় দৃষ্টিতে;
নানা বর্ণের ওড়না আর পরিমাপহীন পোড়া কাপড়ের স্তুপ
আমাকে উল্টে-পাল্টে বার বার জানতে চেষ্টা চালায়
এ নিবিড় অগ্নিকুন্ডের ভিতরে কোন প্রশ্নের কোন জবাব
নিহিত আছে কিনা! আমি সলজ্জ জবাব দিই, না-জানি না।


সময়ের অবিরাম ঘর্ঘরগুলো কতঘন্টা হলো নিশ্চুপ হয়ে আছে
লাল তাপে গলিত দেহ তার ভীত চোখে তাকিয়ে আছে।
হিসেবের লাল খেরোখাতা, মানবদেহ পরিমাপের
ফিতার অংশ বিশেষ, ভস্মস্তুপের ভিতর দাঁড়িয়ে
সগৌরবে ঘোষণা করছে তার ইতিহাসের, বৈভবগাথা।


এক কোণে অভিমানে উঁকি দিচ্ছে তিনখানা পোড়া সাইকেল
খাক হয়ে যাওয়া দেহ নিয়ে,
আরেক খানে অবিনাশী শেলফ্ এর উপরে দাঁড়িয়ে থাকা
কয়েকটি কাচের বোতল যেন বীর বেশে ঘোষণা করছে
‘‘আমি অবিনাশী, রে আগুন, আমাকে যতোই পোড়ো,
আমি আছি মৃতসঞ্জীবনী শক্তি নিয়ে, আমাকে পোড়াতে পারবে,
ছাই করতে পারবে না।’’


পুড়ে যাওয়া কাঠ-আসবাবপত্র, গাছের ফল, বৈদ্যুতিক প্রবাহ লাইনের
অয্যারযুক্ত তারসমূহ স্মৃতিবহ, ভয়াবহ।
তবুও ঘুরছে মানুষ, পোড়া কয়লার চারপাশে-এমন
স্মৃতি আরো কঠিন, উপযুক্ত শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাবার
কোন গোপন সূত্র সন্ধানে, এমন আমি কখনো দেখিনি।


পুড়ে যাওয়া বৃক্ষ-লতা-পাতা, দেয়ালের পলেস্তরা
উপহাস করে যেন ব’লে কী কর গোবেচারা!
আমি মূঢ় পড়ে থাকি শব্দহীনতা নিয়ে,  জানি না কবে
করতলের নৈঃশব্দ ছেড়ে ফোটা শুরু করবে যেন খৈ।
কবে আবার প্রাণ ফিরে পাবে সময়ের সুনিপূণ আঙুলগুলো,
ছেড়ে যাবে অগণন অবহেলা।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//০৯.০৬.২০১৫; মঙ্গলবার; ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২২//দিনাজপুরের দিনলিপি