১.

আজ আকাশে সারাটি দিন মেঘের আনাগোনা
কালো মেঘের নিবিড় বুনন আকাশ গাঙ্গের পারে
আজ বাতাসে কিসের সুবাস, মনের তানে বোনা
প্রকৃতি তাই উঠছে মেতে, মিহিন সুরের তারে।

গতরাতের এক পশলা বৃষ্টি গায়ে মেখে
কোলা ব্যাঙের একটি ছানা ঘরে এসে জোটে
ছোট্ট শিশু ভয়েই মরে, প্রথম যখন দেখে
খানিক বাদে তাকে নিয়েই খেলায় মেতে ওঠে।

হপ-হপিয়ে লাফ দিয়ে সে লুকায় ঘরের কোণে
তাই না দেখে শিশুও তার পেছনে যায় ছুটে
দুইজনাতে আপোষ-রফা খোঁজে আপন মনে
অনেক পরে সন্ধি, যখন বৃষ্টির ফুল ফোটে।

রাত বেড়েছে ক্লান্ত শিশু, ক্লান্ত ব্যাঙের ছানা
এবার তাকে বিদায় দিতে শিশুর অশ্রু ছোটে,
হাতের তালুয় ব্যাঙের ছানা বাইরে বৃষ্টি ধারা
কোন ধারাটি অধিক সেটা বুঝা যায় না মোটে।

বুকের জলে চোখের জলে বিদায় ব্যাঙের শিশু
ঘরের কোণে একলা কাঁদে ক্ষণিক বন্ধুর শোকে
এমন বারিষ বর্ষা বিধুর মধুর আষাঢ় ঋতু
ঘরের বাহির উঠোন জুড়ে আসর জমিয়ে রাখে।

২.

রাত পেরিয়ে বাদল দিনের প্রথম কদম ফোটে
কালো মেঘের অঝোর ধারায় সুগন্ধ যায় ছ’ড়ে
কত কথা পাখনা মেলে এই মেঘদূত ঠাটে
এই আষাঢ়ে, এই বর্ষায়, মনের উঠোন জুড়ে।

আমাকে এই বৃষ্টি ধারা নেয় ভাসিয়ে দূরে
মনে চলে যায় গাঙের অথৈ জলের নায়ের কাছে
আঁটো-সাঁটো টোপর খানির একচিলতে উঠোন
ছড়িয়ে থাকে মাঝি মল্লার দুঃখ-সুখের মাঝে।

এই বাংলার হাজার নদী এখন রূপের মেলা
এখন তাদের ভ’রে উঠার দিনের গল্প বলা
শিল্প বর্জ্য, ঘরের বর্জ্য, দখল-দূষণ-বেলা
সব ছাপিয়ে এখন যে তার সবেগ ছুটে চলা।

সময় এখন আটকে আছে জীবন খাঁচার মাঝে
জীবন এখন জীবন্মৃত, হাজার কাজের ভীড়ে
জলস্রোতের শব্দ শুনি এখন কাজের পাশে
মনময়ূরী নাচতে থাকে মনের নদের তীরে।

মন চলে যায় নদীর চরে অঢেল জলের ধারে
শৈশব আর কৈশোর দিন, মন জড়িয়ে যাবে
নদীর সাথে গল্প ক’রে, মনের শিকল ছিঁড়ে
বন্দীশালার জীবন ছেড়ে মুক্তি পাবো কবে?

এস, এম, আরশাদ ইমাম//১৫-০৬-২০১৫, সোমবার//ঢাকার জীবন