হে অচিন পাখি। আবার ফিরে এসো এ উঠোনে,
আবার খুটে খাও সময়ের ধান নিজ ঠোঁটে।
আবার এসো পাখাতে, ঠোঁটেতে খিলাল করো  
দূরপথ পাড়ির ক্লান্তি, মোছ সব হার জিরজিরে ব্যথা।
এখানে অভয়াশ্রম গড়েছি তোমার জন্য, কেউ দেবে না হানা তোমার শান্তিতে।
দূর পাড়ি পাখি এসো আবার, জিরোও আমার পৈঠায়, শাখায়;
ছড়াও তোমার প্রেমের ঝরা পালক এ শ্যামল বনভূমে,
আয়েশে বোজ চোখ দু’দন্ড, এই আমার পরম প্রাপ্তি।


তুমি সুদূরতমা, তুমি নিরুপমা, তুমি সুপর্ণসারথী
তোমার আসার শব্দে, তোমার ডানার হাওয়ার প্রলয়
ভাসায় মন, চরচর, ঝরা পাতা আর তোলে অমৃত স্বর;
তুমি আসো বসো ভরে তোল উঠোন আমার
আয়েশী আয়োজনে, জল তুলে, জলকেলী করে,
ঠোঁটে পোর জলাকীর্ণ কীট আর মাছ-বীজ-তৃণ
আমি সব বিছায়ে রেখেছি তোমার জন্য।


হে অচিন পাখি
তোমার নখরের চাপে ফুঁড়ে যাক বাহু আমার
তোমার ডানার নতুন ঝাপটানি তুলে নিক হৃদপিন্ডকে
রক্তাক্ত বিক্ষত হই, তবু বুক মেলে রাখি পদতলে
বুঝি আসছে উড়বার ক্ষণ, নতুন কোন দিগন্ত চেয়ে আছে
তোমার পথের দিকে, আকাশ রেখায়,
যে পথে উঠবে আর নামবে তোমার অশেষ ডানা।
হে অনন্তের অতুল পাখি, আবার এসো তুমি ফিরবার কালে,
আমার সবুজ জমীন ছেয়ে থাকবে ফুল ও ফসলে
তুমি এসো, প্রতীক্ষায় রইলাম।


পাখি যায় উড়ে, দূরে চলে যায়, ছায়া হয়ে-হাওয়া
চেয়ে থাকি নির্নিমেষে, আকাশ রেখার ক্রমে ক্রমে মুছে যাওয়া
তুমি পাখি চলে যাও, কী রাখ আমার কাছে, সেকী প্রেম, নাকি বীজ
নাকি দিয়ে যাও পরাগ রেণু গায়ে মেখে, কী পার দিতে তুমি এর থেকে?
আমার গাঁয়ের পাখি, সারারাত, সারাভোর ডাকাডাকি, কিচিমিচি
কিছু শুনতে পারি না। মন আমার ভেসে যায় তুমি দূর নীল আসিয়া।
যে পাখি সঙ্গীতে , নানা রূপ ভঙ্গীতে প্রতিক্ষণ ঘিরে রাখে গা,
অবুঝ অমার মন তার দিকে চোখ ফেলে না, তার ঠোঁট পিপাসিত লয়।


আমার অচিন পাখি, ফিরে এসো, এসো এ ডাঙ্গায়, এসো এ মাটিতে
এসো এ গাছের ছায়ায়, এ তরুলতা, এ নদীজল, এ ঘাস-তৃণ
তোমার জন্য কেন অধীর হয়? এ কী সৃষ্টির আশায়? নাকি সবি নিদারুণ ক্ষয়!


এস, এম, আরশাদ ইমাম//১৭-০৬-২০১৫; বুধবার; ৩ আষাঢ়, ১৪২২//ঢাকার জীবন