৪. পায়রা


এখনো আষাঢ়ে মেঘ ভেঙ্গে নামে অপার কান্না ধারা,
বর্ষা এলেই মনে পড়ে যায় বৃষ্টির গম্ভীরা;
ছোট পায়রা তুমি ঘর ছাড়া উঠোনে টানানো তারে,
ভিজেছিলে তুমি একলা সেদিন যদিও সঙ্গী ঘরে।


বাতাসে ছিলো প্রবল প্রবাহ, বৃষ্টি মুষল ধারা
জল-হাওয়া আর বিষন্ন মন, করেছিল দিশেহারা!
যার সাথে তুমি বড় হয়েছিলে বয়সের কশাঘাতে
সেই সে সঙ্গী দূরে চলে গেছে ভালবাসা পড়ে থাকে।


অভিমান তাই কান্না হয়ে ভিজিয়েছে মাথা বুক
বৃষ্টির জলে কান্নাকে ধুয়ে পেয়েছিলে কোন সুখ?
ঘর ছেড়ে সেই বাহির বিশ্বে পেয়েছ কি একেলা?
আজ এই পরিণত বয়েসে বুঝি কী সে অবহেলা।


যাকে ভর করে তুমি বড় হবে নির্ভরতার বাঁধে,
সেই তোমাকে নিক্ষেপ করে প্রতারণার ফাঁদে;
সেই ছিল ভাল দূরে চলে গেল যখন খেলার সাথী
আমার সঙ্গে বন্ধন হলো, আমি হই বর্ষাতি।।


৫.  পোনা ব্যাঙ


ছোট পোনা ব্যাঙ ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ শৈশব জুড়ে আছো
এখনো যে আসে সেই বর্ষা, আজো কি হর্ষে মাতো?
ছোট ছোট শিশু বই খাতা হাতে প্রথম বর্ষা দিনে
তোমার সঙ্গে খেলেছিল তারা বন্ধুত্বের প্রেম-ঋণে।


লাফ দিয়ে ছিল বড় ব্যাঙগুলো লম্বা হলদে পা,
শিশু ব্যাঙ যারা তোমরা ভেজাও ডুব-সাঁতারে গা,
আর কিছুদিন পার হতে দিন লাফ ঝাঁপ নেবো শিখে,
সেদিন দেখাব আমরাও পারি তোমাদের চে’ কম কিসে!


বরষার জলে ভরে ওঠে ডোবা প্রাণ উচ্ছ্বাস বান,
ছোট ব্যাঙগুলো ছুটোছুটি করে, এসো খেলি অফুরান।
সেই দিনগুলো হামাগুড়ি দিয়ে পেরিয়ে এসেছি কবে
বুকের ভিতরে কান পেতে শুনি, বর্ষার উৎসবে।


এখানে নগরে কংক্রীট-ভীড়ে বর্ষা-শূন্য দিন,
সময় বেঁধেছে আস্টে-পৃষ্ঠে, প্রাণ প্রাচুর্য্যহীন;
হাঁস-ফাঁস করি ইটের বাঁধনে বাঁধা পড়া দেহ নিয়ে,
মন পড়ে থাকে আষাঢ় শ্রাবণে, শিব ঠাকুরের বিয়ে।


এখানে এখন নতুন শ্রাবণ, নতুন আষাঢ়ে প্রাণ
ডুবে থাকে কোন বেদনার সুরে, বাজে বিরহীর গান;
নিত্য নতুন টানাপোড়েনে কেটে যায় কত বেলা
কী চৈত্র আর কী ফাল্গুন, কী ছিল শৈশব খেলা!


আমরা গাইছি চির বরষার সঙ্গীত প্রতিটি দিন,
জীবন এখানে কুহু কেয়া আর প্রিয় কদম্ব-হীন;
জীবন আমাদের এভাবেই যাবে নিয়তি এভাবে গড়া,
এ বর্ষা গীত শোনেনি সে ব্যাঙ, দেখেনি জীবন চড়া।


আমাদের এই বৃষ্টি বিধুর টাপুর টুপুর ব্যাথা,
শৈশব ছেড়ে উঠে আসে নিয়ে অগণন কথকতা;
সেই ভালো তুমি ছোট পোনা ব্যাঙ, ব্যাঙাচি হয়ে থাকো,
জীবন কাব্যের এ পংক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখ।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//২৭ জুন ২০১৫; শনিবার; ১৩ আষাঢ় ১৪২২//ঢাকার জীবন