আমাকে চলে যেতে হচ্ছে আব্বু, সময় মেলে না
তোমাকে কিছু বলে যাবার, তাই এই লেখা-
সারাদিন অন্নের অন্বেষণে যদি যায়, ভালো চিন্তা,
ভালো কর্ম, ভালবাসা, দিন শেষে আর
কিছুই থাকে না, উপায়ও না।


পুত্র আমার, বড় বড় কাজে তোমাদের দিন যাবে
বৃহৎ কলের ভিতর তোমরা হবে ক্ষুদ্র প্রেষণা
যন্ত্রের মতো গতি হবে তোমাদের, হিউম্যানয়েড
প্রকৃতি ও পরিবেশ হবে অধরা, তোমাদের সময়ে
আমার এ লেখা হয়তো বড় বেমানান সেকেলে হবে।


কিন্তু জেনো সময় বদলাবে ঠিকই
ক্ষুধা কিন্তু আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকবে গা
বদলাবে ক্ষুধার রূপ রস গন্ধ আকার
বৈশিষ্ট্য কিন্তু কিছুই বদলাবে না।


ভালোবাসা নিও বাবা সোনা, মনে রেখো,
ভালবেসো পরিমিত আহারীর মতো, যতটা সয়
অপচয়ে নষ্ট কোরো না নিজের সময়, স্বকীয়তা
এবং চিন্তা-চেতনাকে, কক্ষণো অপচয় কোরো না।


যত্ন করে আগলে রেখো নিজেকে- এদেশে
নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে কেউ কোনদিন প্রতিদান পায় নি, পাবে না।
যা কিছু করতে হবে এখানে, প্রতিদানহীন;
বরং নিজস্ব সীমাবদ্ধতার ভিতরে থেকে সেবা-ভালবাসা
ছড়িয়ো বৃষ্টি ধারার মত তৃষিতদের কাছে, বেহিসেবী হয়ো না।


লোক উপকার পাবে, মনে রাখবে, উপকার ফুরোলে মনে রাখবে না
এই কথা জেনে ভাল কাজে নেমো, পারলে, নয়তো
অই পথে পা রেখো না, জেনো ওপথ তোমার জন্য নয়।
অপচয় কোরা না, অস্থানে অমূল্য ধন রেখো না,
তোমার যা দান, অর্থ নয়-নিজের বিবেক, বুদ্ধি, বোধ জ্ঞান
এবং ভালোবাসা-অস্থি মজ্জা মাংস না।


ভালোবাসা কর্পূরের মতো-উড়ে যায়
বাতাস এলে, যদিও সুগন্ধ অতি, তবু
একে বন্ধ করে রেখো অন্ধ প্রকোষ্ঠে।
মাঝে মাঝে আলো দিও, হাওয়া দিও না।


ভালবাসা এমনই এক ধারা
উচুঁ-নিচু মানে না কিছু, একেক সময়ে;
সময় পেরোলে আর ধরে রাখতে পারে না
গতি ধারা, হারিয়ে ফেলে পথ
একে দিও না পরিপূর্ণ স্বাধীনতা।
ভালোবাসা দাসত্ব পছন্দ করে-অধীনতা।
স্বাধীনতা এর মজ্জা কুরে খায়, সমগ্র চেতনা
মজ্জায় যদি একবার স্বাধীনতার ক্যান্সার ঢোকে
হারাবে তুমি তাকে, তাকে আর স্ব-স্থানে পাবে না।


সাবধানে থেকো বাবা, সারাক্ষণ, প্রতিকাজে
কথাগুলো স্মরণে রেখো, মেনে চলবার চেষ্টা কোরো,
নয়তো ঠকতে হবে, এর প্রতিধাপে, প্রতি পদক্ষেপে,  দেহ-মনে
পৃথিবী তোমাকে কোন ছাড় দেবে না,
বীরভোগ্যা বসুন্ধরা, কখনো ভুলো না।
বসুন্ধরা কখনো বীরকেও মাফ করে না,
ইতিহাসের শত শত এরেনা (মল্লভূমি) তার স্বাক্ষী।
বীরের রক্তও মানুষ ভুলে যায়,
বীরেরও ভুল কেউ মাফ করে না।
সাধারণ মানুষই অসাধারণ রক্তস্বাক্ষী হতে চায়
নিজের দুর্বলতা-ক্ষুদ্রতার কথা কিন্তু তখন একবারও ভাবে না।


মানুষকে বিশ্বাস করতেই হবে, তবে
বিশ্বাসের ঘুড়ির লাটাই রাখবে নিজের হাতে
এ লাটাইকে কখনো হাতছাড়া করবে না।
মনে রেখো বাবা আছে পাশে, হোক জীবন্মৃত বা মৃত,
সে লেখাগুলোই হোক তোমার পিতার কথা,
দিক নির্দেশনা। সাবধানে থেকো, প্রাণ-পুত্র সোনা।


মূল লেখাঃ ০২-০৫-২০০৮, শুক্রবার, তালতলা, ঢাকা।
পুনর্লিখনঃ  এস, এম, আরশাদ ইমাম//০২ আগস্ট ২০১৫, রবিবার, ১৮ শ্রাবণ ১৪২২//ঢাকার জীবন