প্রিয়তমা, তোমার কাছে আমি একটিই চিঠি পেয়েছিলাম।
সেটি ছিল আমায় দেয়া তোমার প্রথম ও শেষ চিঠি।
তবুও এ মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের যুগে
সে চিঠিই ছিল আমার এক অমূল্য, আরাধ্য প্রাপ্তি।
সে চিঠির জবাব আমি দিতে পারিনি,
কারন সে জবাব নিতে তুমি ছিলে না,
আর কেউ ছিল না তোমায় সে জবাব পৌঁছে দিতে।


প্রিয়তমা, সে চিঠিতে তুমি লিখেছিলে,
“প্রেমহীন পৃথিবীতে আমি কখনও প্রেমের সন্ধান করিনি;
তবে ভালোবাসা খুঁজেছি অনেকবার, সৃষ্টি ও স্রষ্টার কাছে।
তুমি বলেছিলে, ভালোবাসা খুঁজে পেতে নাকি ভালোবাসা বিলিয়ে দিতে হয়!
কিন্তু আমি জানি, ভালোবাসা কোন ব্যবসা নয়,
যাতে বিনিয়োগ করলে একটি লভ্যাংশ চলে আসতে পারে।
তাই আমি শুধু ভালোবাসার কাব্য রচনা করেছি,
আর সে কাব্যে ভঙ্গ করেছি তোমার বেঁধে দেয়া সকল ব্যাকরণ”।


এর পরের অংশটুকু পড়তে আমার কেন জানি অস্বস্তি লাগছিল।
আমি অন্যায় করেছি আমার প্রিয়তমার সাথে;
তার চেয়ে বড় অন্যায় করেছি নিজের সাথে,
নিজের ভালোবাসাকে এক বানিজ্যের পর্যায়ে নিয়ে এসেছি,
যেখানে আছে শুধু আদান প্রদানের চাহিদা।
অতঃপর আমি তাকে মিথ্যা বলেছি, আর প্রার্থনা করেছি,
বিবেকের কাঠগড়ায় জয়ী হোক সকল মিথ্যাবাদী,
আর হারিয়ে যেতে থাক রোজ আত্মগোপন করা স্বপ্নগুলো।
হারিয়ে গেলে তারা হয়ত আর খুন হবে না।


প্রিয়তমা, তুমি আমাকে কখনও নাম ধরে ডাকোনি,
আর আমিও কোনদিন তোমার নাম জানতে চাইনি।
অতঃপর পোস্টমাস্টারের কাছে জমা হতে থাকে
একের পর এক বেনামী চিঠি;
যার শেষটিতে তুমি আমার নাম লিখেছিলে।


প্রিয়তমা, তুমি সে চিঠিতে আরও লিখেছিলে,
“যদি ঐ সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ একদিন মেঘ ছুঁয়ে যায়,
ভালোবাসার জন্য আমি পাড়ি দেবো অসীমের গিরিপথ।
যদি অমানুষের ভীড় থেকে সেখানে গিয়ে কিছু মানুষের দেখা পাই,
তবে ভালোবাসার বিচ্ছুরণে বদলে দেবো এ নগ্ন পৃথিবীকে।
আরও অনেককিছু ভেবেছিলাম সেখানে যাওয়ার আগে।
অথচ মানুষের বদলে সেখানে মিথ্যাবাদী তৈরি হয়।
তাদের প্রতিটি মিথ্যা বারুদ হয়ে ধ্বংস করে মানব সভ্যতাকে।
বারুদের স্তূপে কবির লাশ পড়ে থাকে।
তার রক্ত হয় গন্ধহীন, আর স্বাদ নিয়ে পরিতৃপ্ত হতে থাকে
সব শেয়াল, কুকুর, আর ঐ শকুনের দল”।


প্রিয়তমা, তোমার এ কথাগুলো পড়ার পর
আমার মিথ্যাগুলো আর আমাকে ঘুমোতে দেয়নি।
আমার কবিসত্তা আর কখনও জাগ্রত হয়নি।
আমার চক্ষু-কর্ণ আর কোন নেশায় স্পর্শ করেনি।
তবুও আমি মধ্যরাতে সূর্যের আলো দেখেছি,
আমি দুঃস্বপ্নে প্রিয়তমার অট্টহাসি শুনেছি।
তোমার শেষ চিঠির শেষ কথাটি প্রতি মুহূর্তে
আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ আনে। তুমি বলেছিলে,
“আমি নাকি ভালোবাসার অর্থ জানি না!
আমি আজ সব বুঝি, প্রিয়।
তাই আজ আমি ভালোবাসাকে ঘৃণা করে
ঘৃণার মন্ত্রে আমার ভালোবাসাকে খুঁজে নিয়েছি”।


প্রিয়তমা, আজ আমি তোমার নাম জানি।
তুমিও আমার নাম লিখে চিঠি দিয়েছ।
তবুও আমি তোমার নামে আজ কোন চিঠি লিখব না।
কারন সে চিঠি তোমার কাছে আর পৌঁছাবে না,
আর আমার ভালোবাসাও নয়।
তাই আজ পোস্টমাস্টারের কাছে জমা হয়ে যাবে,
তোমার প্রতি লেখা আমার একানব্বইতম বেনামী চিঠি।