খুব ছেলে বেলায়, যখন তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম।
তখন তুমি আমাকে গল্প শোনাতে।
রুপকথা, সুয়োরানী, দুয়োরানীর গল্প।
মাঝে মাঝে তুমি আমাকে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতে,
পল্লীসুরের গান অথবা কিচ্ছাগীত।
সুর, তাল, লয় কিছুই বুঝতাম না,
শুধু মনে হত গানের সুরে একটা কষ্ট আছে, চিরন্তন কষ্ট!
আমি চুপ হয়ে শুনতাম।
তোমার সুরে আমার মন বিভোর থাকত।
মনে হত তোমার মনে যেন কিসের নিদারুন কষ্ট?
কখনো কখনো কি অভিমানে তুমি আমাকে বলতে-
আব্বুরে আমি যদি দুরে কোথাও চলে যাই?
তখন তুই কি করবি?
এটা বলতে বাবার উপর অভিমান করে,
সংসার নামক গাড়ীর ভারে অতিস্ট হয়ে।
অভাবের যাতনায় পিস্ট হয়ে।
সাথে বউ শ্বাশুড়ী দ্বন্দ্ব, ভাসুর, জ্বা আর ননদদের কলহ!
এসব প্রতিরোধে বাবার অনীহা!
আমি তোমার উত্তরে বলতাম, আমাকে ছেড়ে তুমি কক্ষনো যাবে না।
তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ।
আমি অবাক হয়ে দেখতাম তোমার চোখ ভেজা,
তোমাকে কাঁদতে দেখে আমিও কাঁদতাম!


স্কুল হতে ফিরে তোমাকে না দেখে অশান্ত হয়ে উঠতাম।
তোমাকে ডেকে ডেকে সারা বাড়ী মাথায় তুলতাম।
তখন তুমি কোথা হতে কাজ ফেলে এসে,
আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বলতে-
লক্ষী বাপ আমার! আমার সোনার চাঁন! আমার মানিক! আমার সাত রাজার ধন!
সবাই বলতো এত বড় ছেলেকে কেউ কোলে নেয়!
অথচ তুমি  আমাকে তখন চুমো দিয়ে আদর করছ।


তারপর বড় হলাম, জীবন গড়তে আর জীবিকার তাগিদে শহরে এলাম।
তোমার স্বপ্নের বাস্তব রুপ দিতে, জীবনের বিচিত্রতায় ডুবে গেলাম।
আর তোমার জন্য দিয়ে এলাম অপেক্ষা, আমার জন্য তোমার অপেক্ষা!
আমার ব্যাস্ততা তোমার অপেক্ষা ফুরোতে দেয় না।
তুমি আমার পথ চেয়ে থাক, প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ!
তোমার অপেক্ষা, পথ চেয়ে থাকা আমাকে অপরাধী করে তোলে,
আর তাই অবচেতন মনে বলে উঠি, জননী, ক্ষমা করো মোরে!
আমার মনটাও যে কাঁদে তোমারি তরে, ব্যস্ততার ফাঁকে অবসরে!