অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে
চোখের ক্যানভাসে বেদনার প্রচ্ছদ ফুটিয়ে তুলেছি
সেইদিকে মা করুণ চোখে তাকিয়ে থাকত।
সন্তানের জন্য কিছু করতে না পারার অক্ষমতা
তাকে ঘুণে পোকার মতো কুরে কুরে খায় ।
মায়ের দিকে সজল চোখে তাকিয়ে বলতাম
ভালো করে দেখ মা,সবকিছু ঠিক আছে।


বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপার্টমেন্টের প্রশস্ত বারান্দায়
বুকে কাঁপন ধরা সব সুন্দরীদের পাশ দিয়ে হেঁটে গেছি
তাদের দেখে লাল-নীল স্বপ্নরা এসেছে পাখা মেলে
সেইসব মানবীরা উষ্ণ ঠোঁটের পাপড়ি মেলে আমাকে ডাকেনি
মনকে বুঝিয়েছি অপেক্ষা কর,সবকিছু ঠিক আছে।


বেকার জীবনে মুঠো ভর্তি স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল নিপা
বিয়ের দরজায় কড়া নাড়তেই সব হারিয়ে গেল
বলেছিল সে, ‘প্রতিষ্ঠিত হও তারপর.......।’
অনেকদিন পরে
তার সাথে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল নিউমার্কেটে
একটু দূরে
একটা লোক দেখিয়ে বলল ঐ আমার হাজবেন্ড
তুমি-তো প্রতিষ্ঠিত ছিলে না,তাই...............!
বুকে কান্না চেপে বলেছিলাম সবকিছু ঠিক আছে।


চাকুরীর ভাইবা দিতে অফিসে অফিসে ঘুরেছি
একটুখানি মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে
এখানে সেখানে বেড়িয়েছি যাযাবরের মতো
যখন কোথাও কিছুই মেলেনি
জীবনকে অভিশাপ দিতে দিতে বলেছি
এইসবই ভাগ্যের লিখন সবকিছু ঠিক আছে।


বাবা শয্যাশায়ী চিকিৎসাহীন,ঘরে সংসার ভাঙা বোন
লজ্জায় ঘৃণায় রাতের অন্ধকারে
চোরের মতো মুখ লুকিয়ে বাড়ি ফিরেছি অনেকদিন পরে।
সবার চোখে গভীর বেদনার বোবা দৃষ্টি দেখেছি;
বুকফাটা যন্ত্রণায় ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে উঠেছি
সব ঠিক আছে,সব ঠিক আছে;
আমরা পরাজিত। সবকিছু মেনে নিতে হবে।


সময় বদলায় মানুষ বদলায় ভাগ্যও বদলায়
এখন বিলাসবহুল বাড়ি,দামি গাড়ি,দামি আসবাবপত্র।
অফিসে ঝকঝকে একাডেমিক রেকর্ডধারী অফিসাররা
আমায় দেখে একের পর এক সেলাম ঠুকে যায়
হাত নেড়ে কোনরকমে তাদেরকে বলি,‘ঠিক আছে।’
গোলটেবিল বৈঠকে যখন সিদ্ধান্ত হয়
নতুন প্রজেক্টে ইনভেস্ট লাগবে। বলি,‘ঠিক আছে।’
মানবতার সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়তে
যখন বেদনার্ত মানুষের করুণ আকুতি আহ্বান জানায়
বলি,‘ঠিক আছে।’
এখন সবকিছু ঠিক আছে!  সবকিছু ঠিক আছে!!  সবকিছু ঠিক আছে।