শীর্ণকায় অপুষ্টিতে ভোগা কিছু মানুষ দুর্বল হাতে
তিল তিল করে গড়ে তুলেছে অপরিচ্ছন্ন এক বসতি;
নগরী পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে সেসব ভাঙতে এসেছে বুলডোজার
ওদের তাড়িয়ে যারা আসবে তারা মানুষ।


নির্মাণ হবে বহুতল ভবন, সাজানো হবে নিয়ন আলোয়
উচ্চ মিউজিকে দামী গাড়িতে ছুটে আসবে ক্লান্ত শরীর;
তারপর শীতাতাপ কক্ষে ঘুমের রাজ্যে
পরীদের ডানায় ভর করে চলে যাবে এক পাহাড়ী ঝর্ণার কাছে।
তাই এত----- আয়োজন!


বুলডোজারের চাকার নিচে বস্তিগুলো গুড়িয়ে যাচ্ছে
বাতাসে অসহায় মানুষের ক্রন্দনের প্রতিধ্বনি
অথচ লোভী চোখগুলোয় ভেসে উঠছে বৃহৎ অট্টালিকার ছবি
ধ্বংসের পৈশাচিক উল্লাস।


ছোট এই ঝুপড়িতে আজ সকালেও যে হাত
প্রিয়তমাকে লতার মতো জড়িয়ে ছিল
সেই হাত পুলিশের লাঠির আঘাতে ভেঙে গেল;
প্রিয়তমার বুকের উষ্ণতায় যে মুখে ছড়িয়ে ছিল
সদ্য ফোটা বেলী ফুলের কোমল আভা
সেইখানে ফুটে উঠেছে বিভীষিকার নীল আতংক।


সারাদিনমান হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে কপালে ঘামের স্রোত
অথচ চোখে ভরা খুশির ঝিলিক নিয়ে বাড়ি ফেরা।
খবর পেয়ে ছোট্ট শিশুটি খেলা ছেড়ে
যে ঘরে ছুটে গিয়ে বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তো
সেই ঘর আজ ভেঙ্গে গেল; মিশে গেল মাটির সাথে।


ঘাম ঝরা কপালে এখন রক্ত ঝরছে
উচ্ছ্বাসিত কচি শিশুর মুখে এখন বিষাদের কালো ছায়া
তোমাদের নিষ্ঠুরতার নির্বাক দর্শক;
তীব্র ঘৃণায় প্রতিশোধের আগুন বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।


জানোয়ারগুলো হঠিয়ে তোমরা যারা আসছো মানুষ
ভেবে দেখেছ কি কখনও ?
বিশ্রামে বিধ্বস্ত বিবিদের মলিন মুখ দেখে
তোমাদের নিদ্রাহীন রাত
অথচ এখানে পরম মমতায় ক্ষুর্ধাত শিশুকে
গল্প শোনাতে শোনাতে মা নিদ্রার কোলে ঢুলে পড়তো।
শ্যামলা বধূর শুকনো ঠোঁটের বাঁকা হাসিতে
চাঁদের আলো উচ্ছলে পড়তো, সুখের আবেশে কষ্ট হারিয়ে যেত।


রাতের আঁধারে ইবলিস্ যখন কালো ডায়েরী হাতে
তোমাদের ঘরে,
তখন এখানে স্বর্গের দূত এসে সোনার হরফে লিখতো নাম।
তোমাদের চোখে যারা ঘৃণিত জীব
বিধাতার কাছে তারাই মানুষ;
সেই মানুষকে তাড়িয়ে আজ হয়েছে তোমাদের স্বার্থের জয়।