সত্তরের ঊর্ধ্বে বৃদ্ধা বেড়িয়ে পড়েছে
রাস্তায় রাজপথে ভাঙা একটা চশমায়;
হাতে বাঁকা লাঠি আর সাদা একটা চাদর সম্বল।
একটু দিশাহারা বুঝতে পারেনা পথঘাট।
তবু আজ সে এই বিশেষ দিনে বেড়িয়ে পড়েছে।
কি করবে আর কি করবেনা এই ভাবনা
তাঁর আঁকিবুঁকি মুখমণ্ডল ঘিরে ।


রাস্তার মাঝখানে একটা জটলা।
স্বাধীনতার পতাকা তুলবে তারই প্রস্তুতি।
ধীর কদমে ছেলে ছোকরাদের কাছে সে এগিয়ে যায়।
তোমরা এখানে কি করছ বাবারা? কত ফুল মালা!
এই সাদাকালো ছবিগুলো কাদের একটু বলবে?
চোখেতো ভালো দেখিনা। বলনা একটু শুনি...
একজন অতি উৎসাহী বলে উঠল
- কি দরকার? চলে যাও নিজের কাজে।
একজন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল
- তুমি কানে শুনতে পাওনা, চোখে দেখতে পাওনা।
এখানে সবটায় খুব পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে।
আজ এখনি কম্বল বিতরণ হবেনা, তুমি পরে এসো।
আর একজন চিৎকার করে বলল
- কি হচ্ছে আসল কাজে সবাই ফাঁকি দিচ্ছে।
নে নে কাজে হাত লাগা। নয়তো কপালে কষ্ট আছে।
সরিয়ে  দে উটকো যতোসব ঝামেলা;
নেতা মন্ত্রীরা এসে কথা শোনাবে, ভালো লাগবে?


বৃদ্ধা তাও সেখান থেকে একটুকুও নড়লোনা।
সটান সেখানে দাঁড়িয়ে থাকল যেন নীরব দর্শক।
একজনের খুব খারাপ লেগেছিল সে এগিয়ে গেল
বলল- ঠাকুমা বলো কি জানতে চাও? আমি সব বলছি।
আজ এখানে বিজয় দিবস উৎসব।
অনেক ধূমধাম করে অনুষ্ঠান হবে।
নেতা মন্ত্রীরা ভাষণ দেবে, দেশের গান হবে ।
মাল্যদান হবে সম্বর্ধনা দেওয়া হবে কয়েকজনকে।
সবার শেষে কম্বলদান, সে অনেক দেরি।
বৃদ্ধার চোখে মুখে তখনো জিজ্ঞাসা দেখে
ছেলেটা বলে যায়। অধীর শ্রোতা শুনতে থাকে।
যারা দেশের স্বাধীনতা আনতে প্রাণ দিয়েছেন,
এই অনুষ্ঠান তাঁহাদেরকে উদ্দেশ্য করে।


উৎসাহী সেই শ্রোতা
হাত বাড়িয়ে ছেলেটার হাত ধরে ফেলে।
-দেখতো সোনাবাবা এখানে আমার স্বামীর ছবি আছে কিনা?
সেইযে রাত্রিরে চলে গেল আর ফিরে এলোনা।
যাবার সময় শুধু বলে গেল - স্বাধীনতা আনতে যাচ্ছি।
কথা দিচ্ছি সাবরমতী যুদ্ধ শেষে ফিরে আসবো।
যুদ্ধ কি এখনো শেষ হয়নি বাবা।
তাই কি সে এখনো ফিরে এলোনা। কতদিন হয়ে গেল।
হয়তো দিনে দিনে পঞ্চাশ বসন্ত পার হয়েছে!
তাই যদি হবে সে কি তবে শহীদ হয়েছে?
তাঁর ছবি কি এই ছবির ভিতরে আছে?
ছেলেটা বলে উঠলো- তোমার স্বামীর নাম কি?
এই বয়েসেও বৃদ্ধার মুখ লজ্জায় রক্তিম আভা ।
-স্বামীর নাম কি মুখে আনতে হয়?
ধীরকদমে দুজনে এগিয়ে যায় ছবিগুলোর দিকে।
দেখতে দেখতে একটা ছবির কাছে
বৃদ্ধা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে
এক্কেবারে নিথর নিস্তব্ধ থামের মতন।