নন্দিনী


           চলে আসার সময় তোমায় বলে আসা হয়নি। আশার মুহূর্তে তোমার মুখটা এত ছায়াঘন হয়ে যায় যে আমি দেখতে পারিনা, সেই জন্যই। তোমার দুচোখে বৃষ্টি দেখলে আমার যাওয়ার পথ পিচ্ছিল হয়ে পড়ে।
       আসার সময় ট্রেনের কামরায় মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতেই ব্যাঙ্গালোর পৌঁছে গেলাম । এখানে যে আমাদের থাকার ব্যবস্থা এত ভালো যে কি বলব। একরাশ মুগ্ধতা যেন ছড়িয়ে রাখা আছে ঘর দুয়ার জানলার স্বচ্ছ কাঁচের দৃশ্যমানতা বাড়ির আনাচে কানাচে। দীর্ঘ পথের যন্ত্রণা সবটাই ভুলে গেলাম। না এ শহর আমার শহর নয়, তবু শহর আমাকে কেমন যেন ভালোবাসায় আচ্ছন্ন করল। দিনেরবেলায় কলকাতার মতন গরম মোটেই নেই। রাতে হালকা কম্বল লাগছে। হঠাৎ বৃষ্টি নামলো, জানলার কাঁচ দিয়ে দেখছি রাস্তা ভিজে গেছে। উঁচু উঁচু লম্বা অচেনা গাছগুলো অঝোর বৃষ্টিতে স্নান করছে। কিছু চেনা গাছ ও নজরে পড়ছে বেশিরভাগ অচেনা গাছ অচেনা শহরের মতো। কেমন যেন আমাকে চিনতে চায় বুঝতে চায় ওরা। আমিও হাত বাড়িয়ে দিলাম। হাত বাড়ালেই তো বন্ধু হয় তাই না! কিছুক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেল ঝটপট রাস্তাও শুকনো হয়ে গেল। বৃষ্টির চিহ্নমাত্র নেই । কিন্তু গাছের উপর থেকে ভিজে পাতার বৃষ্টি টুপ টুপ করে পড়তে লাগলো মাটিতে,আমার চোখের সামনে। এযেন  বৃষ্টি শেষেও ঝরা পাতার আনন্দ বৃষ্টি। আমারও ভিজতে ইচ্ছা করলো, কিন্তু সাহস পেলাম না। বিদেশ বিভূইয়ে তোমাকে ছাড়া একলা আছি? যদি অসুখ করে ! তোমার মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। যেন স্পষ্ট বলে ফেললে - যে কাজে এসেছ সেই কাজ সারতে পারবেনা, ইচ্ছা দমন করো। ব্যাস আমার ইচ্ছাবেলুন চুপসে গেল, সত্যিইতো যেকাজে এসেছি সে কাজটাই তো করা হবে না।


     তোমাকে না পাঠানো চিঠি দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে মার্জনা কোরো। সেদিন হাসপাতাল থেকে ফিরছি, আবার সেই বৃষ্টির সাথে দেখা বৃষ্টি পড়ছে, বৃষ্টিরকনা আমার শরীর মাথা ছুঁতে চায়ছে, আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম। পথের সারথির আপত্তি শুনে সেই ইচ্ছা সংবরণ করলাম। আজ বৃষ্টির ভাবগতিক একটু বেসামাল, থামতেই চায়ছেনা ভাবলাম হয়তো নির্দিষ্ট জায়গায় ফিরলেই নিশ্চয় ভিজতে হবে। কিন্তু নাহ আমি যখন যথাস্থানে পৌঁছলাম, দেখি বৃষ্টি থেমে গেছে রাস্তা বেশ খটখটে শুকনো। ভাবলাম হয়তো বৃষ্টি হয়নি পাশের জনকে জিজ্ঞাসা করলাম বলল- বৃষ্টি হয়েছিল; রাস্তা যে শুকনো! হেসে বললো - এখানকার বৃষ্টি এখানকার শহর এইরকমই; মনটা আবার স্নিগ্ধতায় কেমন যেন ভালোলাগা বেড়ে গেল।  তবে কি এ শহর আমাকে আপন করে নিয়েছে!হয়তো তাই, কাল ফিরে যাবো। ভালো থেকো শহর; ভালো থেকো বৃষ্টি মেয়ে।
     নন্দিনী, আমি যখন তোমার বাড়ি গীতাঞ্জলির দরজায় বেল দেবো। তুমি কিন্তু আমাকে হাসি মুখে, বরণ করে নিও। আজ থাক।


ইতি মেঘদূত