গেস্ট হাউসে একটা সভা ছিল।  পৌঁছে গেছিলাম বেশ একটু আগেই।  তাই গেস্ট হাউসের পিছনের দিকে আপনমনে হাঁটছিলাম। ওখানে ছিল বড় বড় অনেক গাছ। আর ছিল কাঁচা পাকা আম ফলে থাকা কয়েকটা গাছ। ওদের গায়ে এত সুন্দর রঙ যেন এই মাটিতে খসে পড়ল বলে। নিরাপত্তারক্ষী পিছন থেকে বলে উঠলো স্যার মাথায় পাকা আম পড়তে পারে সাবধানে এখানে হাঁটবেন।


    সভা চলাকালীন ঝড় উঠলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরেই শব্দজনিত কারণে চমকে উঠলাম প্রায় সকলেই। মনে পড়ল ছোটবেলায় এই ঝড়ে কত আম কুড়িয়েছি অপু দুর্গার মতন। মন বলল চল ছোটবেলায় ঘুরে আসি। তাই “ একটু আসছি’’ বলেই সেই বাগানে ফিরে গেলাম। আকাশ মেঘে মেঘে ঢেকেছে তাই অকালেই  সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ঝড় যেন গাছগুলোকে ভেবেছে পাঞ্চালী তাই দুঃশাসনের মতন শাসন করে চলেছে। ভেঙে পড়ছে ডাল ঝরে পড়ছে পাতা আর আম। তার মধ্যেই কেউ কেউ কুড়িয়ে বেড়াচ্ছে আম। আমার ও কেমন ইচ্ছা হোল সব ভব্যতা দূরে রেখে একটু আম কুড়াই।


     ফোনটা তখুনি বেজে উঠলো । দেখি মায়ের নাম উঠে এসেছে । ভারী অবাক কাণ্ড! জানি এটা ভুল!  ধরব কি ধরবনা ভাবছি। কাছেই কোথাও বিদ্যুৎ চমকে বাজ পড়ল। ফোন ধরলেই মা এখনি বলে উঠবে – খোকা বাইরে ভীষণ ঝড় উঠেছে তুই এখন কোথায়? তোর হৃদয়ে আমার মতন মেশিন বসানো আছে মনে রাখিস। খুব বৃষ্টি হবে আজ ছাতা নিয়ে যাসনি কেন? তোরা এই সময় বাইরে থাকলে আমি ঘরে কি করে থাকি বলতো! খুব খুব চিন্তা হয়। সাবধানে কোথাও আশ্রয় নিস। ঝড় বৃষ্টি থামলে সকাল সকাল বাড়ি ফিরে আসিস। মন আমার কেবল কু ডাকে কেন কে জানে!  মা চলে গেছে প্রায় পাঁচ বছর হবে। তবু আজ কেন  ফোন বাজে? ভাবলাম রঙ নাম্বার। তারপর ভাবলাম দেখিনা কি হয়। অপর প্রান্তে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে কোন এক মা যেন বলে গেল এক নিঃশ্বাসে - বিশাল আছে? ও আমার ছেলে; অবিকল আমার মায়ের মতন করে বলে গেল একই কথা একই সুরে মনে হল যেন উনিই আমার মা। বলার সুযোগ এল – বললাম আপনি ভুল নাম্বারে ফোন করেছেন । ও তাই বুঝি ... লাইনটা কেটে গেল। অনেক ভাবনার তরঙ্গ ঢেউ খেলে যাচ্ছে হৃদয় সমুদ্রে।


       নিরপত্তা রক্ষী  কিছু আম হাতে দিয়ে বলে গেল – স্যার এই আমগুলো আপনার। আমার চোখে জিজ্ঞাসা দেখে বুঝে সে আরও বলল – মা বলতেন দুঃখ ভাগ করে নিলে দুঃখ কমে যায়, আর আনন্দ ভাগ করে নিলে আনন্দ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আপনি এই আমগুলো গ্রহন করলে আমার খুব ভালো লাগবে। মানে আমার মায়ের আত্মা শান্তি পাবে। মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলাম।