বিয়েতে সবাই অনেক শাড়ি পায় ।
আমার বেলা ঠিক তেমনটি হলোনা ।
যাওবা পেলাম সিংহভাগ আত্মীয়দের বন্টন ।
মামারবাড়ি মানুষ হয়েছি বিয়েটা তারায় দিল কিনা!
মেজমামার বিরুদ্ধে যাই কী করে ?  
করিমপুর থেকে কলকাতায় শ্বশুরবাড়িতে এলাম।
ভাবলাম, বৌভাতে পুষিয়ে যাবে, না ভাবনায় ভুল ছিল ।
পুরিতে জোড়া হানিমুন সেরেছি ।
এখানে ওখানে যেতে হ্য় নতুন বিয়ের পর গেছি,
রোজই প্রায় একই শাড়িতে লজ্জা লাগত ।


    হটাত্‍ দেখি ঘরে পুরোনো সুটকেস অবাক হলাম।
শাশুড়ি মাতা বললেন - বাক্সটা তোমার ছোট ননদিনীর,
তোমার ঘরে অনেক জায়গা তাই রেখেছে, খুলোনা যেন।
স্থানাভাবে বাড়ির সামান্য দূরে শানু বাসা ভাড়া নিয়েছে,
খাওয়া দাওয়া এবাড়ী রাতে ঘুমোতে ওবাড়ি যেতাম।
মন্দ লাগতোনা, ঝড় বৃষ্টিতে একটু খারাপ লাগতো ।
অদম্য কৌতুহল সেই রাতেই বাক্সটা খুললাম,
দেখি অনেকগুলো দামী দামী শাড়ি।
একটা শাড়ি একটু অন্যরকম, হাতে নেড়েচেড়ে রেখে দিলাম।
ও সমবেত গান করবে রবীন্দ্রসদনে ২৫শে বৈশাখ সকালে ;    
আমাকে যেতে হবে । আমার অনেকদিনের শখ পূরণ ,
কিন্ত সেই একই শাড়ি মন খারাপ । শানু বললে,
ওই বাক্সে অনেক শাড়ি আছে ওখান থেকে একটা নিও ।


   ''ধ্বনিল আহবান  মধুর গম্ভীর প্রভাত ''
সমবেত গান শুনছি ।  চাপা গলায় চকিতে কেউ বলল
'' এই মেয়ে শাড়ির প্লেট খুলে,  পিছনে আঁচল ছড়িয়ে দাও ''
দাঁড়ালেননা দ্রুতপায়ে মঞ্চে উঠে গেলেন ।
মাথায় জুই মালা, একদম আমার মত শাড়ি,
সাদা জমি বেগুনীপাড়ে সোনালী জড়ির কাজ ।
নিজের ভুলটুকু চকিতে শুধরে নিলাম।
অনুষ্ঠান শেষে চোখে জল দেখে শানু বলে - প্রমিতাদি কিছু...?  
কেঁদে ফেললাম – তেমন কিছুনা তবে অনুষ্ঠান দেখবনা ।
এক্ষুনি ট্যাক্সি ডাকো বাড়ি যাবো, এক মুহূর্ত এখানে নয় ।
শাড়িটা ননদিনী ফিরিয়ে নেয়নি, বাক্সটা পরেরদিন আর দেখিনি ।
সেদিনের লজ্জার কথা আজও ভুলিনি ।