পল্টুদা নিজেকে উত্তম কুমার ভাবে । দেখতে শুনতে মন্দ নয় । মাথার চুল মহানায়কের ছাটে ছাটা। পল্টুদা খুব ভালো গিটার বাজায় । পল্টুদাকে বেশির ভাগ সময় হলুদ বাড়ির দোতলার দিকে চেয়ে থাকে । কারণ ! আছে ! আছে ! ঐ বাড়িতে থাকে সুচিত্রাদি । দারুন দেখতে । আমার চোখে দেখা অনেক সুন্দরীদের মধ্যে একজন... অতএব পল্টুদা জাল ফেলেছে মাছ ধরবে বলে ।  পল্টুদা'র মন গিটারে গান বাজতে থাকে ।
  " তুমি কি এমনি করে থাকবে দুরে "
     আমি চিত্রাদি বলে ডাকতাম । আমাকে টিউশন পড়াতো, ইদানিং একটা গান সব সময় গুনগুন করে গায় । লতাজীর একটা গান আছে ।
'' প্রেম একবার এসেছিল নিরবে "
      এইভাবে চলতে থাকে দিন থেকে মাস , মাসের পর মাস । কোনদিন এই দুজনকে সরাসরি কথা বলতে দেখিনি । এবারে পাড়ার দুর্গাপূজার সম্পাদক পল্টুদা । কেমন করে জানি আমি হয়ে গেলাম পল্টুদার চ্যালা । একদিন একটা চিঠির মত আমার হতে গুঁজে দিয়ে পল্টুদা - এটা চাঁদার রসিদ, তোর চিত্রাদিকে দিবি এছাড়া কারোর হাতে দিবিনা । যথাস্থানে  চিত্রাদিকে দিয়েছিলাম । পরদিন বিকেলে পড়তে গিয়ে দেখি চিত্রাদি নেই । কোথায় জানি গেছে । ফিরে আসছিলাম দেখি দিদি বাড়ি ঢুকছে । দেখছি অন্য এক মানুষ মুখে পরিচিত অন্য একটা গান ... আমাকে বললে - কাল আসিস । রাস্তায় এসে দেখি পল্টুদা... একটু আনমনা লাল বাইকটাতে বসে সেই পরিচিত একই গান গায়ছে ।  
" এই পথ  যদি না শেষ হ্য় ''
        আমাকে দেখে মুচকি হাসলো... আমার কেন জানি রাগ হলো । কথা না বলে বাড়ি গেলাম । পুজোর প্যান্ডেলে চারদিন আমি সাক্ষী ছিলাম । কেমন করে ওদের দুজনের ভালবাসা একটু একটু করে গভীর হল । লক্ষী পুজোর আগের দিন লেকের দিকে গেছিলাম । অবাক কান্ড কামিনী গাছের ঝোপ থেকে ভেসে আসছে চেনা গলায় দৈতকন্ঠের একটা গান ।
'' এই যে হেথায় কুঞ্জছায়ায় স্বপ্ন "
      পরের দিন পড়তে গিয়ে দেখি সুচিত্রাদি বাড়ি ফেরেনি আর পল্টুদা ও বাড়ি নেই । বিশাল একটা গন্ডগোল । আমার বাবার বদলি চাকরি কদিনেই চলে যেতে হল দিল্লি । হারিয়ে গেল পল্টুদা আর সুচিত্রাদি ।


      কেটেছে প্রায় ২২ বছর । কলকাতা বুক ফেয়ারে চকিতে দেখা সুচিত্রাদির সাথে । হল অনেক কথা অনেক গল্প । অনেক চোখের জল... শেষে বলেছিল আমার জন্য একটা গান করবি...
" মুছে যাওয়া দিন গুলো আমায় যে "