সৌম্য স্যার,
    
     বুঝতে পারছিনা, কেমন করে বোঝাবো যে আমি আপনাকে কতটা পছন্দ করি। সামনে  উচ্চ মাধ্যমিক তাই বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের জন্য বাবা আপনাকে পড়াতে বলেছেন। আগের মাস্টার মশায় ছোট থেকে আমায় পড়ান সেই ইকির মিকির যখন পড়ি তখন থেকে। আজ আপনার সাথে আমার প্রথম আলাপ হোল তাই এই দিন আমার কাছে বিশেষ বিশেষ দিন। কেন?  কারণ দীর্ঘ দিনের আশা আজ পূর্ণ হয়েছে।


         আপনাকে দেখতাম অন্যপাড়ার খেলার মাঠে। ছয় বলে ছক্কা মারতে, বিনা রানে আউট হতে ও দেখেছি, আবার শুনেছি মৈত্রী ক্লাবের কবিতার আসরে। নামটাও বেশ সুন্দর সৌম্য। নামের সাথে ব্যবহারেও কত সাদৃশ্য। আপনি আমাকে না চিনলেও আমি আপনাকে অনেকদিন ধরেই চিনি। কাউকে কাউকে দেখলেই তুমি বলতে ইচ্ছা করে আমার কাছে হয়তো আপনিই সেই মানুষ। আমি কিন্তু তুমিই বলি। অবশ্য মনে মনেই। আলাপতো কোনদিন হয়নি। বিদিপ্তা আমার বন্ধু। ওর দিদির সাথে, উদিপ্ত স্লোগানে পথে ঘাটে মিছিলের ঠিক অগ্রভাগে। তবে প্রথম দেখেছি বিদিপ্তাদের বাড়িতে। সরস্বতী পূজার দিনে অঞ্জলির সময়। দুচোখ ভরে সেদিন তোমায় দেখেছিলাম।
        
       আজ প্রথম আলাপ। আমাকে দেখে জলদগম্ভীর স্বরে জিজ্ঞাসা করলে - কি নাম? বুকের ভিতর কেমন একটা তোলপাড় হোল! কেন যে মুখে কথা সরছিল না কে জানে! অস্ফুটস্বরে বলেছিলাম 'পারমিতা'। তুমি শুধু বললে - বাহ। আমি তখন অথই জলে। অমন গভীর চোখ আগে কখনো দেখিনি। মনে হচ্ছিল একটা তরতাজা তরুন এক বাঘ সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একটা দুরন্ত হরিণকে অবলোকন করছে। শেষে আমিই দৃষ্টি নামিয়ে আনি। একসময় তুমি বললে -আজ থাক, সামনের দিন পড়াব। মা ততক্ষনে জলখাবার নিয়ে এসেছে। এককাপ চায়ের সাথে একটা প্লেটে বাস্প ওঠা ডিমভাজা। দীর্ঘদিনের মাস্টার মশায় খুব পছন্দ করতেন । শেষে মেশে মায়ের অনুরোধে চায়ের কাপে চুমুক, ডিমভাজা নাকচ করে দিলে। যাবার সময় মৃদু হাসি রেখে গেল। কেন জানিনা । তোমায় নিয়ে সাত পাঁচ ভেবে লিখে ফেললাম একটা দীর্ঘ প্রেমের চিঠি। তোমার হাতে দিতে পারবো কি না জানিনা।


ইতি তোমার ছাত্রী - পারমিতা