বাঙালির নাকি পায়ের তলায় সর্ষে, সে পূজা হোক আর দুদিনের ছুটিই হোক। আমরা বন্ধুরা সবে যুবক হয়েছি, তখন থেকেই থেকে আমাদের একরকম অভ্যেস ছিল। বিশেষ করে পূজার সময় ধারে কাছে ভারতের যেকোন রাজ্যে পাড়ি দিতাম। সেবার পাঁচবন্ধু মিলে বারিপদা উড়িষ্যায় পাড়ি দিলাম।রাতের ট্রেন সকালে পৌঁছে দিল। স্টেশন থেকে আবার বাসে করে কয়েক ঘণ্টার পথ বারিপদা রয় লজে যেতে হবে। পথে দারুন আমেজ জঙ্গলের ভিতর দিয়ে রাস্তা চলেছে আধো আলছায়া রোদ্দুর মেশা পথ  কখন চড়ায় উৎরায় । জঙ্গলের সবুজ নাম না জানা উঁচু গাছ ভেদ করে রোদ্দুর মাঝে মাঝে চোখে পড়ছে। একটা বুনো গন্ধে বাসময় আশ্চর্য মেদুরতা। নতুন দেশ নতুন ভাষা ভাল লাগছে। এক গায়ক  পথচলতি বাসে উঠে গান শুরু করে ভিক্ষার আশায় '' ধন্য মহাপ্রভু মহিমা তুমাহারো'' সুন্দর সুরে বেশে মনে ধরা। একসময় পৌঁছে গেলাম রয় লজ। মানিক বুক করেছিল লজ একঘরে পাঁচবন্ধু। পরেরদিন জঙ্গল সাফারি ছিল জিপে করে। সারাদিন ভয় উৎকণ্ঠা আর উৎসাহে জঙ্গল বেড়ালাম । কদিন আগেই নাকি এখানে বাঘ দেখা গিয়েছিল, তাই জীপচালকের ছিল বাড়তি সাবধানতা। সারাদিনে হরিণ ছাড়া অন্যকোন পশুর দেখা মেলেনি। তবে হ্যাঁ হাতি এবং সেই বিশেষ প্রাণীটির বিষ্ঠা দেখান হয়েছিল আমাদের বন্ধুদের।


     লজে ফিরতেই এক ভদ্রমহিলা এসে বললেন -  মনে করে আমি তোমাদের কাকিমা। তোমরা কেউ অঞ্জলি দাওনি নিশ্চয়। আমি তোমাদের জন্য অষ্টমীর অঞ্জলি দিয়ে প্রসাদ রেখে দিয়েছি, একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়ে যেও তোমাদের ডাক্তার কাকা অপেক্ষা করছে। মনে মনে ভাবলাম কাকিমা রূপে দুর্গাদেবী এখানেও আমাদের সাথে বিরাজমান। মুখ চাওয়া চাওয়ি করে লাভ নেই। যেতেই হবে । তোমাদের মধ্যে কে গান করছিল কাল রাতে তার গান ও শুনব আমরা। আর বিশেষ নিমন্ত্রন কালকে আমাদের সাথে তোমরাও যাবে কুমির প্রজেক্ট দেখতে কেমন? আমরাও বেড়াতে কলকাতা থেকে এসেছি সাথে দুই মেয়ে সুস্মিতা সুপ্রিয়া তোমাদের সাথে আলাপ করতে চায়। এসো কিন্তু। শুরু হোল বন্ধুদের ভিতর এক নতুন অসম প্রতিযোগিতা। এখন ভাবলে হাসি আসে। আগ্রহ আমাদের  কমবেশি সবার  ছিল, কারণ মেয়ে দুটি ছিল যথেষ্ট সুন্দরী। লজে আসার সময় এক ঝলক দেখেছিলাম।


     আমরা বন্ধুরা হতবাক। বিদেশ বিভূঁইতে বেড়াতে এসে কেমন করে পর মানুষ আপন হয়ে এক পরিবার হয়ে যায়। বেশ অবাক লাগে।  সেবার বারিপদা বেড়ানো হয়েছিল অনেক আনন্দ আর বিচিত্র অভিজ্ঞতা। তবে ডাক্তার পরিবার আমাদের ভুলে যায়নি কলকাতায় এসে আরো একবার ওদের বাড়ি যাবার ডাক দিয়েছিল।