আলোচনা সভায় লেখা কবি আমি-না র প্রথম লেখার অনুভবে দুলাইন মন্তব্য করতে গিয়ে দেখলাম অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে লেখাটা। তাই বাধ্য হয়েই আলাদা পোষ্ট দিলাম। মনে হোল আমার প্রথম লেখার সঙ্গে জড়িত আরো কিছু কথা জানলে হয়তো সবার ভালোই লাগবে।


আমার প্রথম কবিতার কাহিনী একটু 'হটকে'। লেখা আমার এগারো কি বারো বছর বয়সে। কবিতার প্রথম কয়েকটা লাইন এরকম ছিল:
ছোট্ট পাখি চলছে উড়ে,
শীতের সকাল মিষ্টি হাওয়াটা ফুরফুরে।
দেখাচ্ছে চমৎকার ভোরের রোদ্দুরে,
চলেছে উড়ে।
হয়তো বা কোন গাছের ডালেতে বাঁধবে বাসা।
খড়কুটো এনে বাসাটা করবে খাসা……


আর মনে নেই।


অদ্ভূত ব্যপারটা হল। লেখাটা একটা পত্রিকায় বেরিয়েছিল। কিন্তু লেখাটা ছাপা হয় নি। কারন যে পত্রিকায় বেরিয়েছিল সেটা ছিল এক হাতে লেখা ত্রৈমাসিক পত্রিকা। আমাদের পাড়া থেকেই বের হত। একটা সুন্দর নাম ছিল পত্রিকাটার, কিন্তু তাও এখন আর মনে নেই।
আমাদের ছোটবেলায়, ছোট্ট মফস্বল শহরের ছোট্ট এক পাড়ায় মুষ্টিমেয় কয়েক জনের পক্ষে পত্রিকা বার করার সাধ প্রচুর থাকলেও সাধ্য ছিল না। অগত্যা এই ছিল একমাত্র উপায়।  পত্রিকা বের করার জন্য, কয়েকজনের একটি দল শুরুতে লেখা সংগ্রহ করতেন পাড়ার কচিকাঁচা থেকে বুড়ো লেখক লেখিকাদের থেকে। তারপর তা সম্পাদনা করে (পাতে দেবার যোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্যে) বিষয়বস্তু নির্বাচন করতেন। তাতে প্রায় মাস খানেক । তারপর শুরু হত একটি ভালো কাগজের সাদা পাতার পত্রিকা সাইজের একটি বই বাঁধানো। তারপর হত পাড়ার কোন শিল্পীকে দিয়ে তার প্রচ্ছদ আঁকানো এবং আরো কিছু ছবি মাঝের ও শেষের পাতা গুলোতে আঁকানো, আর তারপর শুরু হত লেখা। এখানে উল্লেখযোগ্য এর সিংহভাগ কাজই করতেন আমাদের পাড়ার রতনদা। যেহেতু উনি মুদ্রন শিল্পে কর্মরত ছিলেন, ওনার পত্রিকার ফরম্যাট সম্বন্ধে দারুণ জ্ঞান ছিল। আর লেখার কাজটাও উনিই করতেন, কারন হাতের লেখা ছিল মুক্তাক্ষর। ওনারই নিরলশ চেষ্টায় দুই থেকে আড়াই মাসে তৈরি হয়ে উঠত একেকটি সংখ্যা।
তারপর শুরু হত পত্রিকাটির পাড়া পরিক্রমা। প্রত্যেক বাড়িতে কয়েকদিন করে সময় দেওয়া হত পড়ার জন্য। যখন আমাদের পালা আসতো আর আমার লেখা থাকতো, পরম মমতায় উলটে পালটে হাত বুলিয়ে আদর করতাম সেই হাতে লেখা পত্রিকাকে। কিছুতেই ইচ্ছে করত না সেই পত্রিকা ফেরত দিতে, তবু দিতে হত বাকি সবার কথা ভেবে। আর এই পড়ার পর্ব যখন চলতো তখনই উদ্যোগ শুরু হত পরের সংখ্যার জন্য। যদিও বিনা পারিশ্রমকে এই মাসের পর মাস খাটুনি খেটে যাওয়া শুধু ভালো কিছু করার তাগিদে, চলেনি বেশী দিন। আমাদের খুব দুঃখ হয়েছিলো যখন দেখলাম ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল পত্রিকাটি।
এই পত্রিকার দৌলতে, আরেকটা ব্যপারে খুব অবাক হতাম। এমন এমন লেখা পেতাম পাড়ার চেনা পরিচিত এমন সব লোকের কাছ থেকে যা সত্যি অবাক করার মতো। হয়তো বাজারের সবজি বিক্রেতা লিখে ফেলল দু পাতার একটি ভ্রমণ কাহিনী, (হোক না তা পাশের শহরেরই, হোক না তা গরুর রচনার স্টাইলে)।  বা পাড়ার ফেল করা কিশোরীটি লিখে ফেলল দেড় পাতার এক কবিতা। বা আমার মতন লাজুক অথচ পশ্চাতদেশ পরিপক্ক বাচ্চা ছেলেও লিখে ফেলল দুলাইন। তবে তখন প্রেম ভালোবাসা নিয়ে লেখা ছিল শক্তভাবে না-না। কারন সে সময়ের পাড়াগুলো আমাদের বৃহত্তর বাড়িই ছিল বলা যায়। সেখানে ওসব নিষিদ্ধ জিনিষ একদমই পারমিটেড ছিলো না। আর গুরুজনেদের হাতেও তো পত্রিকাটা যেত।


কবিবন্ধুদের অনুরোধ এই ধরনের অভিজ্ঞতা আর কারো থাকলে প্লীজ শেয়ার করুন।