হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,


সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে


অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে


সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;


আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,


আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।



চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,


মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর


হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা


সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,


তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‌‌‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’


পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।



সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন


সন্ধা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;


পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন


তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;


সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;


থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।