যদিও অনেকদিনই চীন দেশে আছি, চীনা ভাষাটা একটুও রপ্ত করতে পারিনি। একটুও জানি না বললে ভুল বলা হবে। দুয়েকটা কথা শিখেছি বলাটাই ঠিক। যাই হোক, যেটা বলতে বসা, সেই প্রসঙ্গে আসি।
গত মাসে দিন তিনেকয়ের ছুটি ছিল। আমার এক চীনা বন্ধু বলল, ওটা ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যাল অথবা দুয়াং য়ু ফেস্টিভ্যাল। আগের বছরও যদিও ছুটি ছিল কিন্তু কেন ছুটি সেটা জানার ইচ্ছে হয়নি। এইবার হল। তাকে জিজ্ঞেস করতে সেও বিশেষ কিছু বলতে পারলো না। পরে আমার আরেক কলিগ মিঃ ওয়াঙ চুং থান-য়ের কাছে জানতে পারলাম এই ছুটিটা, কূ ইয়ুয়ান নামক এক কবির স্মৃতি উপলক্ষে। বেশ কৌতূহল হল। তাই আরও জানতে চাইলাম। যা শুনলাম, তাই লিখছি।
কূ ইয়ুয়ান-য়ের জন্ম সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় নি। চু রাজ্যে হুয়াই রাজার রাজত্ব কালে কূ ইয়ুয়ান মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর নিষেধ না শুনে, রাজা যখন পাশের অত্যন্ত শক্তিশালী কুইন রাজ্যের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলো, তখন কূ ইয়ুয়ান দুঃখে রাজসভা ত্যাগ করেন। তারপর তিনি প্রধানত কবিতা লেখায় মননিবেশ করেছিলেন। তাঁর কবিটার বিষয়বস্তু ছিল দেশপ্রেম।
খৃষ্টপূর্ব ২৭৮ সালে, কূ ইয়ুয়ান-য়ের কথা মিলে গেল। কুইন রাজ্য চু রাজ্যকে আক্রমণ করল। আকস্মিক আক্রমণে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ল চু রাজ্যের প্রতিরোধ। দখল হয়ে গেল  কূ ইয়ুয়ান-য়ের মাতৃভূমি। মাতৃভূমি পরাধীন হয়ে যাওয়ার দুঃখে কূ ইয়ুয়ান ‘ইং-য়ের দুঃখ’ নামক একটি কবিতা রচনা করে মীলো নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
প্রচলিত আছে, সেই সময়, কূ ইয়ুয়ান-য়ের লেখার যারা ভক্ত ছিল, তারা শ’য়ে শ’য়ে নৌকো নিয়ে তাকে খুঁজতে বেরিয়ে গেল। কমপক্ষে যদি তাঁর শরীরটাও পাওয়া যায় এই আশায়। অনেক খুঁজেও যখন কূ ইয়ুয়ানকে পাওয়া গেল না, তখন তারা নদীর জলে নানা রকম খাবার ফেলতে লাগলো, যাতে মাছেরা কূ ইয়ুয়ান-য়ের শরীরটা না খেয়ে ওই খাবারগুলো খায়।
আজও নাকি হুনান রাজ্যে, মীলো নদীর জলে পাথর ফেলে প্রতিবাদ করার প্রচলন আছে।  
বেশ লাগলো এই কবির সংক্ষিপ্ত জীবন কাহিনী শুনে। সেই দেশপ্রেমী কবির মৃত্যুর উপলক্ষে এই ছুটি আজও পালন করা হচ্ছে।
মিঃ ওয়াঙ চুং থান খুজে পেতে একটা বই বের করে আমাকে ইয়ুয়ান-য়ের দুটো কবিতা পড়ে শোনাল। মানেটাও বুঝিয়ে দিলো। সেই দুটো কবিটার সামান্য কিছু অংশ অনুবাদ করার চেষ্টা করলাম।
  
১) লী সাও


পথ বড় লম্বা, দৃশ্য মনোরম,
নিজেকে সেই পথেই চালনা করলাম।
যেখানে স্বর্গ ভূমিকে চুম্বন করে,
সেই পশ্চিম সমুদ্র তটেই আবার দেখা হবে।


২) পাহাড়ি আত্মা


পাহাড়ি মানুষটি মিষ্টি তৃণ-এর মত সুগন্ধি,
পাইন আর দেবদারু-র ছায়াঘন পাথুরে ঝর্ণা পান করে।
আপনি, হে প্রভু, আমার চিন্তা করছেন, আবার দ্বিধাও করছেন। '
বজ্রের গর্জন আর বৃষ্টির আঁধার,
পশুরা কাঁদছে সারা রাত গর্জন করে;
বাতাস বয়ে যায় ওই ন্যাড়া গাছের উপর দিয়ে।
আমি নবীন প্রভু, তাই আমি অকারনেই দুঃখ করি।


আমি কবিতা ডট কম-এ নতুনদের মধ্যেই পড়ি। তাই নিয়ম-কানুনগুলো আস্তে আস্তে শিখছি। আলোচনা সভায় এটা দেওয়া ঠিক কিনা জানি না। এই মহান কবি সম্বন্ধে অন্য সদস্যদের না জানিয়ে পারলাম না। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।