ভবের হাটে আনাগোনা কত মানুষ কত চেনা
অনাপ্য ধন বেচা কেনা;
অশিত বাবু আর কতকাল চলবে মহাজনের
সদয়ে চলা আওয়ারি আওরত্ !
জমিদারির অধীনে চলা আওসত ,বিধাতার
সাজানো গোষ্ঠীভুক্ত আওলাদ বুনিয়াদ।
বাবা শেখালো বিদ্যা-শিক্ষা, মাথার ঘাম পায়ে
ফেলে, মহাজনের দায় টেনে;
মাযে আমার জন্ম দিতেই অনেক আগে গিয়েছে
আমায় ছেড়ে।
জন্মের আগে মা বলেছিল ছেলে হলে স্কুল
মাষ্টার,মেয়ে হলে ডাক্তার;
স্ত্রীর কথা রক্ষা করতে বাবা আমায় পাঠায়
পাঠাগার।
তাইত বিদ্যা অর্জন শেষে আজ আমি স্কুলের
মাষ্টার।।
বিয়ে করলাম বাবার জানা নিধিরামের মেয়ে
কমলিনী সরকার;
তারপর আষ্টে-পৃষ্ঠে বাধিল আমায় কমলিনীর
মায়াঘর।।
অসার-সুসার মাথায় নিয়ে গড়িলাম কমলিনীর
সুখের সংসার;
দুই ছেলে আর এক মেয়েতে আজ আমার ভরা
পরিবার।।
বাবার সাথে পুতাপুতনীর কি যে আনন্দের রঙ
বাহার,
হঠাৎ একদিন বিকেল বেলা বাবা বলিল খোকা
তোর  মায়ের কথা মনে পড়ছে বারবার;
আর বুঝি আর সময় দিবেনা বিধাতা আকবর
হাঁপানি  রোগটা  বেড়ে  গিয়েছে শেষ  বয়সে
আবার।
একটা কথা বলব তোরে বলিনি এতকাল
জমিদারের দেওয়া দুটো পাওনা দিতে পারিনি
আমি দুই মৌসুমের ক্ষণ,
পাইতে পারে খাজনা বাবদ হাজার দশেক টাকা
সব মিলায়ে বন্ধক ছিল পাশের গায়ের জমিটা।।
আমি বলেছিলাম ছেলে আমার চাকরী পেলে
শোধ করিবে দায়,
আমি বললাম টেনশন নিওনা বাবা আমি থাকতে
তোমার কিসের ভয়!
একথা শুনে বাবা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যায় ...
এই ঘুমি তার শেষ ঘুম ছিল বুঝিলাম সন্ধায়।।


এমনি করে যায় কিছু দিন পিতৃ বিয়োগে আমার;
কমলিনী বলল বড় ছেলেটা বাবা বাবা বলে খুঁজে  
বেড়াচ্ছে তোমার।
কইসে আমার বড় সোনা, লক্ষ্মী মেয়েটা কই ,
ছোট ছেলেটা দোলনায় দেখ দুলছে হাসি ভরা
টইটই।।
তোদের নিয়ে স্বপ্ন আমার বাবার থেকেও বিশাল ;
তোরা হবি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নামি দামি মাধব
মাষ্টারের ছেলে মেয়ে বিদ্বান।
দেশের সেবাই থাকবি তোরা মানবতায় সর্বদা ম্লান;
গর্ব করে বলব আমি তোরা আমার সন্তান।
আজ তাহারা বড় হয়েছে , বুড়ো হয়েছি আমিও
কমলিনীও বুড়ি হয়েছে কিন্তু মনের মাঝে তাকে
খুজে পাই আগের মত এখনও;
তারা দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াই আমায় দেখাশোনার
সু্যোগ নাইতো কারো।
মাত্র কয়েক বছর পর তারা এসেছিল সবাই মায়ের
অসুস্থতায়,
ছেলে মেয়েরা বলে দেখাবে ঊচ্চমানের চিকিৎসালয়;
যাওয়ার আগে অনুনয় বিনয় করেছিল সে আমায়,
কেমনে ছেড়ে থাকবে সে আমায় ।
চিকিৎসা করতে গিয়ে ধরা পড়ে ব্লাড ক্যান্সার
তার কিছু দিন পরেই চিতায় দহন জ্বলে তার।
আজ একাকীর্তের দহন জ্বলে বক্ষে আমার
তার বিয়োগে ভাল লাগেনা এই স্বাধীন বাংলার
সুজলা সুফলা সুখের ঘর।।
অশিত বাবু,  
সেই ত্রিশ বছর আগের মত পড়ে আছি এই ভবে
তাইত আমি  দিন গুনি কখন যেতে হবে বাবার
মত এই জীবন সংসার ছেড়ে ।।