আমি ঢাকা, বুড়িগঙ্গার সন্তান
      আজগর আলী
রচনাকাল ২৩-১০-২০১৭ইংরেজি


সপ্তম শতকে কী নবমে, শতকটা
ঠিকঠাক এখন মনে নেই,
একদল সুসভ্য মানুষের প্রাণান্তকরণ প্রচেষ্টায়-
বিক্ষুব্ধ বুড়িগঙ্গা নদীর জঠর থেকে
আমাকে টেনেটুনে বের করা হয়েছিলো,


হ্যাঁ,আমি আমার কথাই বলছিলাম, আমি ঢাকা,
বুড়িগঙ্গার সন্তান।
বিস্তীর্ণ দিগন্তে মাঝে সাজে প্রাণবন্ত জনবসতি এখানে সেখানে, বাকিসব ফাঁকা।


ফুরফুরে মেজাজে প্রাণের কোলাহলে আমি প্রাণবন্ত,
শৈশবে যেমন নির্ভার থাকে আর কী,
আমারও তেমন ভারহীন পথচলা,
মাঝে মাঝে বুড়ী মায়ের আদুরে কানমলা ছাড়া আমার সে কী আনন্দ আর আনন্দ!


বলে বুঝানো সহজ হলেও, আবেগে খেই হারিয়ে ফেলবো।
যাগ্গে, তবুওতো মনের কথা,সুখের দিনের কথাগুলো,এখান থেকে,ওখান থেকে,
যতদূর মনে পড়ে আর কী,
বলে বলে স্মৃতি রোমন্থন,তৃপ্তির ঢেকুর তোলা আর কী,
আমার বিস্তীর্ণ গতরে ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়,
সবুজের সোমারোহ, মহাসোমারোহে প্রকৃতির- ঝলসানিতে আমি শিহরিত, ফুলকিত।


আমি মনে হয় খেই হারিয়ে ফেলছি,
আগেই বলেছিলাম,
গুছিয়ে বলতে পারবো না।
যাই হোক, বলতে থাকি---- কেমন?


নদীর সন্তান বলে কথা, আমার গতরে গতরেও জনপদের বাসিন্দারা নদী খুঁজে পাওয়ার চেষ্টায় পুকুর, দীঘি, পুশকুনি, কুপ খনন করে,
দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আর কী,


তবুও আমার ভালো লাগতো জলকাদার লুটোপুটি,জলকেলিতে মেতে থাকা
সে যে কী প্রশান্তি!
বাচ্ছা মানুষতো এগুলো এমনিতেই ভালো লাগতো,
নিজেকে তখনও ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারিনি।
তবুও প্রতিদিন কিছুকিছু বিষয় মনে দাগতো কাটতো।
বয়েস কী তখন বুঝতামনা, তবে এতটুকুন বুঝতে শিখেছি, সময় বয়ে যাচ্ছে--


সময়গুলো ভালোই কাটছিলো,
কিন্তু মাঝে মাঝে মাটি পোড়ার তীব্র গন্ধে
আমার আত্মা কেঁপে উঠতো,
আমার আর্তচিৎকার ধ্বনি সবুজ বনানী গাছ-গাছালি ছাড়া কেউ শুনতো বলে মনে হয় না,
মাঝে মাঝে গাছেদের গগন বিদারী আর্তচিৎকারও আমার কর্ণকুহরে পৌঁছাতো---
কান পেতে শুনতে থাকা ছাড়া আমারও তেমন কিছুই করার ছিলো না।


মাঝে মাঝে জীর্ণ শীর্ণ মৃতপ্রায় বুড়ী মায়ের বুক থেকে
পালিয়ে যেতে মন চাইতো, কিন্তু
এই যে বিশাল বপু, এত এত দায় নিয়ে-
কোথায় পালাবো, লুকাবো কোথায়??
আমিতো সেই রকম নিরুপায়।


এর পরের সুদীর্ঘ জীবনালেখ্য বর্ণনা করে কোন মহাভারত রচনা করার মন, মানসিকতা
এই মুহুর্তে কোনটাই আমার নেই।
তবে জীবনের এই ক্রান্তি লগ্নে এতটুকুন বলতে পারি,
সেই যে মাটিপোড়া গন্ধ আর গাছেদের অার্তচিৎকারের সাথে সাথে ক্রমান্বয় বিকট আওয়াজে,
এখন কোনটা যে মাটিপোড়া,
কোনটা যে গাছকাটা, কোনটা যে কীসের আঘাত!
কোনটাই শনাক্ত করতে পারি না, শুধু বিকট আওয়াজে, আওয়াজে আমার কর্ণকুহর ফেটে যায়,
আগে কানের পর্দা ফেটে রক্ত ঝরতো । এখন কানটা সাথে আছে কী না তাও বুঝতে পারি না।


হ্যাঁ,আমি আমার কথাই বলছিলাম, আমি ঢাকা,
বুড়িগঙ্গার সন্তান।