সুখের মানচিত্র
       আজগর আলী


এইসব শুভ্র শারদ প্রাতে বসুমতি-
মেতে উঠতো মহুয়ামাতাল গন্ধে,
শিশিরের আলিঙ্গনে ভোরগুলো নির্মল-
সময় কাটাতো সীমাহীন আনন্দে,
মেঘবালিকারা মৃদু নৃত্যে হেঁটে যেতো-
সোনালি নদীর কূলঘেঁষে মৌ মৌ ছন্দে।


হিল্লোল কলরবে সহজিয়ার সুরে সজনী
পাখিরা তান তুলতো সুবাসিত গানে,
বেহুশ কবিতাগুলোও বেজে উঠতো-
আনমনে রসিক কবি- অকবির মনে।


আকিঞ্চন পুষ্প কাননেও মধুভোজে-
মধুকর মত্ত,গুঞ্জন তুলতো মিলনের সুরে,
বিষাদমাখা ক্লেদগুলো লুকাতো সজীব-
ঘাসে, জীর্ণ পথগুলো হারাতো সুদূরে।


শিল্পীর আঁকা তুলির আঁচড়ে, নিখুঁত
মানচিত্রে ফুটে উঠতো সুখেদের জলছবি,
গোধূলি বিলাস ভ্রমণ শেষে মৃদু গুঞ্জনে
পূবের গগনে হেসে উঠতো দিবাকর রবি।


শব্দভোলা কবিদের শূণ্য জাহাজ
ভরে উঠতো শব্দের নিপূণ ঐশ্বর্যে,
মহাকাব্যের মিলনমেলায় ছন্দের বিকিকিনি
চলতো কী দারুণ! অনুপম মাধুর্যে।


এইসব আনন্দগান সুখ-সৌন্দর্যের কলতান
আমার বিগত জনমের কিঞ্চিত উপাখ্যান,
এই জনমের অভিজ্ঞতা এখনো শেষ হয়নি
তবুও বলছি কিছুটা, যদিও আকিঞ্চন।


এখনও এখানে শরত আসে,শিশির ভাসে,
সূর্য হাসে, কবিরা কবিতা রচে,
পাখিদের কলরব ভ্রমরের গুঞ্জনে মায়াবী
ঐক্যতান লহরী এখনও বাজে বাতাসে।


ব্যতিক্রম হলো:-
এইসব সুবিমল পরিবেশে অনায়াসে
যোগ হলো অগন্য বিকৃত উপসর্গ,
ধোঁয়াশা পথের বাঁকে হাঁটুগেঁড়ে বসে যায়
অসহায়রূপে নিরুপায় নিসর্গ।


ধর্ষিতা মায়ের আর্তচিৎকার ধ্বনি
বেওয়ারিশ সভ্যতার লাশেদের পাহাড়ে-
উৎকট বাতাস আঁকে  বিকট তৈলচিত্র,
বিবেক পচা গন্ধে চারিদিক ছেয়ে গেছে আজ,
হাভাতে শকুনের নখরে বিকৃত হয়েছে সুখের মানচিত্র।


★★★★★★  ★★★★★★  ★★★★★★


তোমার কথাই বলছিলাম,
তোমাদেরকেই বলছি----
               --আজগর আলী


লোলুপ সময়ের নিঠুর গ্রাস থেকে একদা
তুমিই ছিনিয়ে এনেছিলে মায়ের স্বাধীকার,
অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলে ক্ষুধিত পাষাণে
বঞ্চিত আর লাঞ্ছিত জনতার।


আগুন দিয়েছিলে দ্বিগুণ হোমানলে
কামাতুর সিংহের ডেরায়,
রক্তখচিত সবুজ বদ্বীপ মানচিত্র
পূবের ভূখণ্ডে করেছিলে খোদাই।


পবিত্র এক স্বপ্নের ফলন  
ঘরে তুলেছিলে সেই মাহীন সময়ে,
মিহিন ঊষা এনেছিলে
তিমিরের বুক চিরে,আমাদের এ ভুঁইয়ে।


তোমার কথাই বলছিলাম
হ্যাঁ, তোমাদেরকেই বলছি-----


ভেবেছিলাম সুকঠিণ নিরাপত্তা বলয়ে
ঘিরে রাখবে আমার অস্তিত্ব,
বাস্তবে রূপ দিবে আমার স্বপ্নগুলো
যা ছিলো সুদূর পরাহত।


তোমার উঠোনে অঙ্কুরোদগোমিত হবে  
আমার স্বাধের পুঁই আর শিম বিচি, দিনান্তে,
তোমার বাগানে উড়ে বেড়াবে
আমাদের সব নিরীহ পাখিরা, নিশ্চিন্তে।


আমার বোনের ইজ্জত হবে তোমার আমানত
আমার মায়ের মুখের হাসিতে খুঁজে নিবে ইবাদত।


আজ দেখি আমার সকল ভাবনায়
নিরাশা আর আশায় যত গুড়ে বালি,
তোমরা রক্ষক! ভক্ষক সেজেছো,
খেয়েছো আমাদের স্বাধীকারের ফালি,
আমার মায়ের ইজ্জত নিয়ে খেলছো
এ কেমন ছিনিমিনি! খালি খালি।


তোমার উদ্যত যৌবন শিশ্নের আঁচড়ে-
আমার বোনের অক্ষত ডায়েরি হয় ছারখার,
তোমার কামনার আগুনে জ্বলে পুড়ে অঙ্গার
আমার দিদির কত বাসনার সংসার।


মাতৃজমিনে আজ খাণ্ডবদাহ হয় তোমার তাণ্ডবে"
তুলার মত উড়ে যায় আমার মায়ের স্বপ্নরা যত,
তোমাদের বেহিসেবি যৌবনের ঘোড়দৌড়ে-
আমার বোনেরা ছুটে ভীত হরিণীর মত।


অথচ, ভেবেছিলাম তোমাদের অগ্নিমূর্তি
কাঁপন ধরাবে অত্যাচারীর মগজে মস্তকে মনে,
বিকলাঙ্গ ধর্ষকের চেঙ্গিস লিঙ্গ খসে
পড়বে তোমাদের দৃষ্টির আগুনে।