--------মৃত্যুর প্রস্তুতি


কাল স্বপ্নে আমাদের দাদাকে
আমি মরে যেতে দেখলাম!


তিনি এমনভাবে মরছেন!
যেন তাঁর আগে কেউ আর মরে নি
এত  ব্যস্তসমস্ত দাদাকে আগে
কখনও আমি দেখিনি


বাবাকে জমির দলিল
মাকে দাদির গয়না
আমাকে সাইকেলের চাবি
কত হন্তদন্ত হয়েইনা বুঝিয়ে দিলেন


বড্ড মৃত্যুতাড়িত হচ্ছেন বোঝাই যাচ্ছে
কী ব্যপার! কোন রোগ নেই বালাই নেই
তবুও তিনি মরতে বসেছেন!
মৃত্যুর এমন সফল প্রস্তুতি
বোধহয় কেউ কখনও আগে নেয়নি


দাদা বাজারে যাওয়ার সময়
আমি যেমন সঙ্গী হতে বায়না ধরতাম
দাদার স্বতস্ফুর্ত মৃত্যু প্রস্তুতি দেখে
আমিও যাওয়ার জেদ ধরলাম তাঁর সাথে


ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার
তার আগে স্বপ্ন!
দাদা আমাকে নিতে রাজি হলেন কিনা
তা আর জানতে পারিনি।


           জলকণ্যা


সফেদমাখা সমুদ্রের ভাঁজ খুলে
যখন এলেন
তবে শুনুন হে জলকণ্যা
এই চেনা মুখটি দেখবো বলে
ঊনচল্লিশ বসন্ত ধরে
চোখটাকে জাগিয়ে রেখেছি গোপনে
আমিও একবুক সাগর ধরে রেখেছি
নির্জনে
আপনি সাঁতরাবেনতো!
কুলাতে পারবেন কিনা দেখুন
আসুন আপনাকে ছুঁয়ে দেখি একবার
কতটা নোনতা হয়েছে আপনার স্বাদ


হাসুনতো দেখি এবার
ঝর্ণার বুক গলে পাথর ঝরে পড়ার শব্দ
শেষ কবে দেখেছি মনে নেই
প্রকৃতির সাথে প্রতিযোগিতা করে সাধ্য কার!


কিন্তু এই যে আপনি হাসলেন!
আমার কাছে কি মনে হলো জানেন?
বিশ্বাস করুন
উন্মাদনায় আমার হৃৎপিণ্ড খুলে
যাওয়ার উপক্রম হয়েছে যেন


সুজল দেখলেতো বলতো
এ হাসি নয়রে পাগলা এ হলো
পৃথিবীর খ্যাতনামা বহুজাতিক কোম্পানির
বছরসেরা বিজ্ঞাপন


      এবার চলুন ভাঁড় হই


চলুন বিবেককে চড়া দামে বন্ধক
রেখে ভাঁড় হয়ে যাই ভাঁড়
গত আষাঢ় মাসের কথা মনে আছেতো
বিবেকের তাড়নায় আপনি
হারালেন আপনার প্রেমিকাকে
আমি হারিয়েছি সাহস
হারাতে হবে বলে
একটা গোলাপ কিনে মল্লিকার সামনে
হাটু গেড়ে বসতে পারিনি আমি
শুনতে পাননি চলুন
এখনই মোক্ষম সময়
অন্য কেউ দখলে নিতে পারে
ক্ষমতার উর্বর মাটি
বরং খাঁটি ভাঁড় হতে পারলে
ভালো কিছুই হবে এবার চলুন।


             বাবার গুণ


আমার বাবার একটা অদ্ভুত গুণ ছিলো
তিনি সবকিছুই ভুলে যেতে পারতেন
অনায়াসে
একাত্তরের স্মৃতি
যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি
দুর্ভিক্ষের সাথে হামাগুড়ি
এসব ভুলে বসেছেন বাবা বহু আগে
নদীর ভাঙন
উদ্ভাস্তু জীবন
এসব ভয়াল জীবনবৃন্তান্ত বাবা
মুছে দিতেন এক ঘষায়


কে জানতো!
আমাদের মায়ের ছেড়ে যাওয়াকে
ছয়মাসেও ভুলতে পারবেন না তিনি!


বাবার গুণের কথা মাথায় রেখে
আমরাও কোনো উদ্যোগ নিলাম না সেভাবে
ভাবলাম বাবারতো পাথরহৃদয়!


কিন্তু কী আশ্চর্য!
ঠিক ছয়মাস পেরুতে না পেরুতেই
ভুলতে না পারার বোঝায়
বাবা নুয়ে পড়লেন মৃত্যুর সিথানে


এবার আমরা সচেষ্ট হয়ে
বাবার উপরে স্মৃতি ভোলাবার জোর অভিযান চালাই
কিন্তু হায় তখনতো সময় বসে গেছে পাটে
মাকে ভুলতে না পারার ব্যর্থতায়
বাবাও চলে গেলেন ওপারে।


                বিভ্রান্ত


গতকাল একটি মেলা বসেছিলো
সাবেক রেসকোর্সের ময়দানে!
বাহান্নর ভাষা আন্দোলন
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান
একাত্তরের স্বাধীনতার সংগ্রাম
নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন
থরেথরে সাজানো ছিলো মেলার অগ্রভাগে


ঠিক এর পেছনের সারিতেই
এন্টিক কালেকশন হিসেবে
আঠারোশ সাতান্নসাল
সিপাহী বিদ্রোহ
নীল বিদ্রোহ
ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনকেও
সাজিয়ে রাখা হলো লাইনে লাইনে


সাদা কালো লম্বা বেঁটে
ছাত্র শিক্ষক শ্রমিক পেশাজীবী
রাজনীতিবিদ বুদ্ধিজীবী
সকল শ্রেণি-পেশার অগণন বাংলাদেশী
ভিড় করেছে মেলাপ্রাঙ্গণে


সবাই উদভ্রান্তের মত ছুটোছুটি করে
স্টলেস্টলে একটু মুক্তি খুঁজছে মুক্তি!


মূল্য যত টাকাই হোক
সবাই একটু আধটু করে
মুক্তি কিনেই ফিরতে চায় মেলা থেকে!


অথচ টাকা নয় পয়সা নয়
কিঞ্চিৎ দৃঢ়তার বিনিময়েই
এরা কিনে নিতে পারতো
ইতিহাস কাঁপানো সব
বাহান্ন একাত্তর কী নব্বই।