-------মসলাদার কবিতা


যখন ঊনিশ বসন্ত বয়স আমার
তখন একবার একটি মজাদার কবিতা
পড়বার স্বাধ জাগলো আমার


আমার হাবিলাষের কথা জানাতেই
তুমি কড়মড়িয়ে বলে উঠলে
আমাকে কী চোখে পড়ছেনা তোমারর!


এরপর তোমার মিহিন কণ্ঠের
সেতার ভেদ করে বের হয়ে আসলো
দুরন্ত এক কারুকাজ


তুমি বললে
আস্তে আস্তে খুলে ফেলো আমার চারিধার
এরপর সযতনে
কামার্ত নয়নে
একেএকে আবৃত্তি করো জগতের
সর্বোৎকৃষ্ট সব মসলাদার কবিতা।


        
         রোমাঞ্চকর প্রেমিকা


গতরাতে স্বপ্নে আমি তোমাকে
এক অন্য রকম রোমাঞ্চকর ভূমিকায়
অবতীর্ণ হতে দেখলাম


শান্ত পেলব কোমল মায়াবী প্রেমিকা আমার;
তুমি হঠাৎ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলে!


ভাবলাম আমার কোনো কসুর ধরা
পড়েছে নিশ্চয়
হয়তোবা শুনেছো আমার কাছে
আবারও চিঠি লিখেছে
রোকেয়া হলের নেত্রী


কিন্তু, এরপর একি দেখলাম আমি!
তুমি হ্যাঁ তুমিই
টিএসসির চত্বরে নজরুলের বিদ্রোহী
কবিতা হয়ে
আবৃত্ত হচ্ছো হাজারো ছাত্রজনতার কণ্ঠে


      
        রেকর্ডারে হবে না


মাগো
আজ ফিরিয়ে দেবো তাদের মেকি স্বাধীনতা
আর পোষাকি গণতন্ত্র
ধনতন্ত্রে অন্ধ হয়ে যাওয়া চোখে তারা
আর দেখে না
সাম্র্যাজ্যবাদের জিকিরের আওায়াজে
আওয়াজে বধির হয়ে গেছে তাদের কান
দোকান খুলে বসে আছে নিষ্ক্রিয় অস্ত্রের
আমাদের আকুল আহাজারি শোনার সময় তাদের
আর হবে না


মাগো
দীর্ঘ ঊনচল্লিশটি বছর কাটানো যায় কী
কেবল একটি মার্চের উত্তাপে!
রেকর্ডার শুনে শুনে জাগবে কী আরেকটি বিপ্লব
বরং আমাকে আরেকটি তরতাজা
তীক্ষ্ণ মার্চ দাও মা
আরেকটি আঠারো মিনিট ধার দাও
তোমার জঠর থেকে


থেকেথেকে শেয়ালের হাঁকডাক
আর ভালো লাগে না এ জনপদে
শ্বাপদের কলিজা বিদীর্ণ করা আরেকটি ভাষণ দাও আবার আমাকে
ঘুমপাড়ানি গান জমা রাখো তোমার
বোকা ছেলেদের সিথানে


তপ্ত রক্তগুলো হিম হয়ে গেলো জলৌকার
শোষণে
ওদের বাজানো সনাতন
রেকর্ডার আর শুনবো না আনমনে
মাগো
বরং আমাকে আরেকটি জলজ্যান্ত শেখমুজিব
দিয়ে দাও গোপনে


               সরলাংক


মাঝেমাঝে ভাবি দুর্বোধ্যসব উপমা দিয়ে
সাজাবো তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতা
প্রতিটি লাইনেলাইনে ঘুরাবো রূপকের রঙতুলি
অনুপ্রাসের ঝঙ্কার তুলবো অন্তত
প্রতিটি লাইনের শেষে
অবশেষে কিছুই হয় না আর
কিছু বুনো পাতাবাহার দিয়েই
সরলাংকের মত
সাজাই আমাদের কবিতা ঘর


হালকা বাতাসেই বের হয়ে পড়ে
এর প্রতিটি ছত্র
একচ্ছত্র আধিপত্যে একটানেই
যে কেউ
খুলে ফেলে আমাদের মুখোশ।


        
        দুচোখে আকাশ কাঁদে


ছ'দিনের কর্মচঞ্চলতার বিনিময়ে
অর্জিত কিছু বিকেল অবশিষ্ট ছিলো আজ
তাই আস্তে আস্তে তোমার ভাঁজটি
খুলে তরজমা করতে লাগলাম
তোমার চোখ আর মুখ


একি হায়ারোগ্লিপিক্সের মত দুর্বোধ্য ঠেকলো সব!
শবের শরীরের মত হিম হয়ে গেলো
আমার সকল অনুভূতি!


একি! একজোড়া আকাশ এসে হাজির
হলো আমার সন্মুখে!
উন্মুখ হয়ে আমি দেখতে থাকলাম
কতটা সফেদ মেঘ ভেসে চলে
এসব আকাশে


মুহুর্তে ছোপছোপ নীল চেপে বসে
মেঘেদের শীতল গায়ে
আবার দক্ষিণের উত্তাল বায়ে
অসহায় হয়ে পড়ে হিমাদ্রীসদৃশ মেঘের স্তুপ


ধুপ করে নিভে যায় নীল
অন্ধকার কালোয় ছেয়ে যায় মায়া
মাঝে মাঝে আমার মৃত ছায়াও
বেয়ে উঠে মেঘেদের গায়ে
হঠাৎ হরিণীরা উবু হয় পায়ে


সুখানুভবের বেদনায়
তুমি অপলক দেখে দেখে কাঁদো!
ভুল কীনা জানি না
আমি দেখি তোমার দুচোখে ভর করে
দুটি আকাশ ফেঁড়ে বৃষ্টিরা কেমন ঝরে


         সভ্যতার রঙমঞ্চ


আমরা আছি আমরা ছিলাম
ইতিহাসের শরীর স্তম্ভ জুড়ে
কিন্তু থাকবো না
হ্যাঁ আমরা থাকবো না একদিন
এই লোকালয়ের কোনো পাতায়
পাওয়া যাবে না আর আমাদের


সুন্দর বনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মত
কিংবা দোয়েল মাছরাঙা কোয়েলের চেয়েও
আমরা বিরল হয়ে যাবো পৃথিবীর বুকে


নগদ নগদ সুখে কর্পোরেট শকুনের দল
খুবলে খাবে পৃথিবীর আবেগ
আমাদের গোড়াশুদ্ধ উপড়ে ফেলবে
ব্যস্ত পৃথিবী


ডিজিটাল পরমায়েশে
চোখের ইশারায় স্মার্টফোনই রচনা করবে
ছড়া কবিতা চিত্রনাট্য  উপন্যাস কিংবা গান
সভ্যতার মৃদু আদেশেই
আমাদের বিলুপ্ত শ্মশান কবর ভেদ করেই
গজিয়ে উঠবে সারিসারি রঙমঞ্চ