গতরাতে ঠিক সুবহি সাদিকের আগে
দরবেশমত এক লোক আমার ডান কানে
একটি দৈববাণীর মত শুনিয়ে গেলেন-
যেন আমি শুনতে পেলাম
আলী উঠে যা
ভোর হওয়ার আগে একচক্কর পৃথিবীটাকে
ঘুরে আসতে হবে--
আমার কানে মৃত্যুর নেশা ঢুকিয়ে দিয়ে
কতিথ দরবেশজনা
এতটা তড়িতের মত  চলে গেলেন যে
কারণ জিজ্ঞেস করার সময়ই পেলাম না--


কিন্তু আমার আত্মা আত্মবিশ্বাসের স্বরে চিৎকার করে আমাকে বলছিলো
ভয় পাসনে তুই
এ আর এমন কঠিন কীরে আলী-


নবী সোলাইমান আর শাহ সেকান্দরের
অঙ্কিত নকশাগুলো হাতে কোরে এখনই বেড়িয়ে পড়না-


তখন বাতাসে মিহিন সুরে বাজছিলো যেন মিনুহিনের সেতার
জোছনার জোয়ার হাতে
আকাশের বুকে দ্বাদশীর চাঁদ
ফুলেরা পাখির সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে
জিকির কোরছে ভোর ভোর ভোর


এহেন রাজসিক পরিস্থিতির ভারে
আমি আমার পরবর্তী করণীয় ঠিক
করতে কিছুটা বিলম্বই করে ফেললাম--


আমি বরাবরই অনুশোচনার ধারেকাছেও
ঘেঁষতাম না
এবারও তার ব্যতিক্রমটি হলো না--


পৃথিবীযাত্রার প্রস্তুতিস্বরূপ
কাঁদে ঝুলালাম রাজ্যের প্রতিশ্রুতি
গলায় ঝুলালাম সাহস
আত্মবিশ্বাসের চাদর গায়ে জড়িয়ে
আমি ঠিক পৃথিবীর জিরো পয়েন্টের ঘাঁড়ে
উঠে দাঁড়ালাম--
সহসাই বাতাসকে বাহন করে আত্মতাড়িত
উডুক্কু সাপের মতন আমি  ছুটলাম পৃথিবীর পথে


অনেকটা পথ যেতেই সমুদ্রের তলদেশ থেকে
দুজোড়া মহিষের শিংয়ে ভর করে
উঠে এলো একজোড়া ঘুটঘুটে অন্ধকার
আমি সেগুলোকে নিছক যুগল কালোপাহাড়
ভেবেই আপাতত ভয় এড়াতে চাইলাম


কিন্তু, আমার মগজ
আমার কান
আমার সকল অনুভূতির নখর
আমার আত্মাকে খামছে ধরে
আমাকে জানান দিলো
এসব কোনো পাহাড় নয়রে বোকা
বিগত হাজার শতকে অপঘাতে পৃথিবীর পথে হারিয়ে যাওয়া সকল মানুষের সন্ধান


আমি তখন বিহব্বলিত চোখে
ভাবতে থাকলাম
হেমলকপানে মৃত্যু যদি অপঘাত হয়
তবে আমি এখানে নিশ্চয়
সক্রেটিসকে খুঁজে পাবোই


ভাবতেই কেমন প্রোজ্বল শিহরণ বোধ করছিলাম-
হন্তদন্ত হয়ে
একেক করে হাতড়াতে থাকলাম অন্ধকারের
প্রতিটি পাতা


একী!
আমার প্রতিটি আঙুলের স্পর্শে  চিৎকার করতে লাগলো


হিরোসিমা নাগাসাকি
প্রথম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ  থেকে শুরু করে
আফগান প্যালেস্টাইন ইরাক সিরিয়া বসনিয়া চেচনিয়া বাংলাদেশ
হার্জেগোবিনিয়া স্পেন কর্ডোভা ইয়েমেন লেবানন কাশ্মিরের  যুদ্ধাঘাতে
হারিয়ে যাওয়া নিরপরাধ নারী শিশু আর বৃদ্ধদের নিরীহ আত্মা


সবাই তারস্বরে আমাকে বলতে লাগলো
হে জীবন্তের প্রতিনিধি
সবলের আত্মা
আমাদের কথা আর ভেবো না
তবে কথা দাও
পারতপক্ষে পৃথিবীতে  আর একটিও
প্রাণ অপঘাতে ঝরে যেতে দিবে না--


অগত্যা পৃথিবী ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে
বাতাসের বেগে আমি জাতিসংঘের  দিকে ছুটতে লাগলাম
আর
চিৎকার করতে থাকলাম
ট্রাম্প  থামুন
কিম থামুন
পুতিন থামুন
সালমান থামুন


দেখি
আপনাদের সকল বুদ্ধিবৃত্তিক প্রযুক্তি
আর বাঘাবাঘা সায়েন্টিস্টদের বড়বড় মাথা এক কোরে
আমাকে একটি প্রশ্নের জবাব দিনতো


আণবিক পারমাণবিক রাসায়নিক
অনেক অস্ত্রইতো বানালেন
এবার থেকে যুদ্ধে শুধু সৈনিক মরবে
মানুষ মরবে না
বলুন আপনাদের অত্যাধুনিক বিশ্বের প্রতি
এমন অস্ত্র বানানোর  দাবীখানা আদৌ অমূলক কীনা??