সারকথা হলো আমার বিষাদ-ব্যথার
কোন ভাগীদার নেই।
        --আজগর আলী


এইসব নিশ্চল রাত্রির খাঁজে খাঁজে
প্রতিদিনকার বিষাদগুলোকে গুজে রেখে
রুটিনমাফিক পরের দিনটা শুরু করা,
এখন ক্রমাগত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।


দেশসেরা ধনকুবেরের ব্যাংক ব্যালেন্সের
মত আমার বিষাদ ব্যালেন্সও-
ক্রমাগত গগনচুম্বী হচ্ছে।


রাত্রির আঁধারের আধারে গচ্ছিত রাখা
বিষাদগুলো একদিন উত্তোলন করতে হবে নির্ঘাত;
ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়, বিষাদ সমাহারকে
আবারো ধরতে হবে আমার মনপাত্রে।


কোন এক বৃষ্টিস্নাত দিনে
যখন রাত্রির রোজনামচায়  
চলবে রুটিনমাফিক কর্মঘন্টা:-
অগত্যা এই আমাকেই আবারো মনের
ঝুলিতে ভরতে হবে বিষাদ-ব্যথার সঞ্চয়,
সুদাসলে বুঝে নিতে হবে ক্রমবর্ধিত
বিষাদ পাহাড়কে।


এরপর আবারো পুঁজি বিনোয়োগ করতে
হবে আগামীর পথে পথে---
বিষাদগুলোর সুসমবন্টন হবে আমার চলার পথে,
বিষাদরা এখানেও আবার বাড়ন্ত লাউডগা-
আর শিমলতার মত লকলকিয়ে বাড়তে থাকবে।


আরো আশার কথা হলো আমার বিষাদের
মালিকানায় কোন শরিকদার নেই,
আমিই বিষাদভাণ্ডারের নিরঙ্কুশ মালিক,অধিপতি।


আবারো প্রতিটি রাতে বিষাদের লভ্যাংশগুলো
জমা রাখবো এসব রাত্রির ব্যাদান খাঁজে
এভাবেই তুমুল আগ্রাসনে আগ্রাসনে গড়ে উঠবে
আমার বিষাদ সাম্রাজ্য।


যেখানে আমিই রাজা, আমিই প্রজা, আমিই ক্রেতা আমিই বিক্রেতা, আমি পুলিশ, আমিই কারা
আমিই আসামী আমিই সাজা।


সারকথা হলো আমার বিষাদ-ব্যথার
কোন ভাগীদার নেই।


★★★★★ ★★★★★ ★★★★★ ★★★★★


কাঁদতে ভুলে গেছি
            --------- আজগর আলী


এইতো সেদিন আমাদের আঁতুড়
ঘরে যখন এসেছিলাম প্রথম;
রুটিনমাফিক আমি কেঁদেছিলাম
যেমন করে প্রতিটি নবজাতক কাঁদে---
জনম দুঃখিনি মায়ের স্তনে তখন স্বার্থহীন স্রষ্টার
সেরা উপহার তরল, তহুরা শরাব।
মায়ের স্তনবৃন্ত মুখে নিয়ে আমি থেমে গেলাম।


স্রষ্টার শিখিয়ে দেওয়া পন্থায়
প্রাণান্তকরণে টানতে থাকলাম---
এ কী! আমার জন্য স্রষ্টার বরাদ্ধকৃত
পবিত্র দুগ্ধ মুখে আসে না। কিন্তু কেন?
আমি আবার কাঁদি, কান্নার রোল যেন থামে না--
থামে না আমার মায়ের করুণ আহাজারিও
বাছা আমার দুধ পায় না, এখন কী করি!


ভাবতে থাকি, আমি কি দুর্বল! অক্ষম!


সপ্তাকাশের ঊর্ধে তখন স্রষ্টা হাসেন  
তীব্র উপহাসে,হা হা হা হা হা----
এরপর জিব্রাইলের ডানার শব্দে আমি কেঁপে উঠি
এ কী! দেখি জিব্রাইল আমার আঁতুড় ঘরে!
কি যেন বলে আমার মায়ের কানে কানে!


শালা ভাগ এখান থেকে,আমি মনে মনে বলি
দেখি জিব্রিলও শুনলো আমার মনের কথাগুলি,
নিমিষে মিলিয়ে গেলো চরাচরের হাওয়ায়
মা আমার খুশির ভেটকি দিয়ে আমার পানে তাকায়
স্তন থেকে টিপে টিপে--
এক চামুচ, দুই চামুচ, করে আমাকে খাওয়ায়
আমার কান্না থামে না--
এরপর বোতলে ভরে, এভাবে, সেভাবে
আমাকে খাওয়ায়---
আমার তৃপ্তি আসে না,
অতৃপ্তির বেদনা আমাকে গ্রাস করে
এসবে আমাকে পোষায় না।


সেদিন চৈত্রের দুপুর, ঠাঁ ঠাঁ রোদ্দুরে
আমার আকণ্ঠ তৃষ্ণা,ক্ষুধাও কম না
মনে হয় আজ্রাইলের পদধ্বনি শুনছি।


শপথ নিলাম আমি মরবো না---
রসুইঘরের এক কোণে
গরমের আরাম বোধের জন্যে
মা আমার ঘুমিয়ে পড়ে--
তখন আমি বসতেও শিখিনি
আমি তীব্র চিৎকারে কেঁদে উঠলাম
মা আমার জেগে উঠলো বলে--


আধো আধো ঘুম আর করুণা মিশ্রিত চোখে
আমার মুখে স্তনবৃন্ত পুরে দিলো
তখন যেন সাক্ষাত শক্তিদেব ভর করলো
আমার উপর। বেঁচে থাকার তাগিদে-
তীব্র হুঙ্কারে গোঙ্গিয়ে গোঙ্গিয়ে টানতে থাকি
সেদিন সকল ব্যারিকেড ভেঙ্গে তিস্তা
ফারাক্কা আমার মুখে,আমি তৃপ্ত হলাম
আর,কান্নাও থামালাম।
এর পর বেশ কিছুদিন আমি কাঁদিনাই।


শৈশব থেকে কৈশরে হেসে খেলেই কাটে
শুধু মায়ের কানমলা ছাড়া,
কৈশর পেরিয়ে যৌবন
অন্তরে তখন মৌবন,
কত দৃষ্টি কত চাহনি কত প্রেম, কত ভালোবাসা!
আমাকে উপেক্ষা করে,
আমি কিছুই মনে করিনি,
আমিতো জানি স্রষ্টাতো বরাদ্ধই রেখেছেন
শুধু হাতিয়ে নিতে হবে, এই যা!
এরপর বিরামহীন চেষ্টা-প্রচেষ্টা---
হাতিয়ে নেওয়ার, আমি ক্রমাগত বিফল হই
প্রেম ভালোবাসার তেষ্টা, কী যে কঠিন-
আমি ছাড়া তা কেউ জানে না
হ্যাঁ, জানেই নাতো জানেই না---


আমি শৈশবের অভিজ্ঞতার কথা
মনে করি, আবার ভাবি
আরে এরাতো কেউ আমার মা নয়!
একটু করুণা করে
চামুচে চামুচে প্রেম দিবে আমারে!
তাহলে এদেরে প্রেমদেবও কিছু বলে না!


অনেক দিন পরের কথা,
প্রেমদেব সুপ্রসন্ন হলো বলে!
আমারও কোপাল খুললো
কেউ একজন আমাকে ভালোবাসলো
কিন্তু,অল্পতেই তাকে হারালাম।
এরপর এক দুই তিন করে
কত প্রেম, কত ভালোবাসা হারালাম!
হিসেব আছে ঠিকই এখন না হয়  না'ই বললাম।


যতবার হারিয়েছি ততবার কেঁদেছি
এরপর আরো কত কী যে হারালাম--
কত প্রিয়জন, কত কত জন-
হারালাম আর কাঁদলাম,
মা হারালাম, বাবা হারালাম,অবশ্য-
এর আগেই তাঁদের ভালোবাসা হারালাম,
স্নেহ হারালাম, বিশ্বাস হারালাম,
ভাই-বোন! এসবের বন্ধন হারালাম,
যতবার হারিয়েছি কেঁদেই পুষিয়েছে
নিজেকে হারানোর আগে আরো অনেক
কিছুই হারানোর আছে--
এবার হারালে আর পোষাতে পারবো না
আমি যে কাঁদতেই ভুলে গেছি......