------ ------- প্রাচীন


সেদিন আমাকে ধরে নিতে এলো
রাজ্যপালের কতেক চ্যালা
আমি চিৎকার করে জানতে চাইলাম;
আমার অপরাধ!
নাকবোঁচা মত কালো এক লোক
নাকিয়ে নাকিয়ে বললো:-
শাঁলা হাঁরামখোঁর বিঁল্ডিং হঁবে দাঁলান হঁবে
শাঁলা তোঁর তাঁতে কিঁ?


আমি চিৎকার করে আবার বললাম
আমাকে মেরে ফেলতে পারো
কিন্তু আমিতো সবুজ বাঁচাবার
শপথ নিয়েছি ----


            শুধুই হাহাকার


জীবনের অথৈ নদিতে অযথাই কাটছি ডুবসাঁতার
কাতারবন্দী হয়ে চল্লিশকদম দূরত্বে কদম ফেলি বারবার  
একবারও চোখে ভাসে না নিকটস্থ চির-গন্তব্যের পথ!
এইতো সেদিন মায়ের বকুনি;
বাবার শাসন এসে ফিসফিস করে
আমাকে ছুঁয়ে গেলো
বলে গেলো আর কত ব্যস্ততা দেখাবিরে খোকা!
জীবনের অমোঘ টানে
উজানে বাওয়া তরীও নিমিষেই
হাওয়া হয়ে যাবে
এই যে ব্যস্ত শহর
অগোছালো রাজপথ
ধুলায় ধূসর পথঘাট
কর্পোরেট হালচাল
সকালের হকার
চায়ের কাপের আওয়াজ
সকল অযুহাত পড়ে থাকবে সযতনে
ইতিহাসের উপকরণ হয়ে
তোমাকে ফিরতে হবে
সাড়ে তিনহাতের ঠিকানায়
সম্পত্তির দলিল থেকেও মুছে যাবে নাম
নতুন জীবনের দরদালানে ঝুলে থাকবে না
তোমার শেষ স্মৃতিটুকুও
শুধুই ইথারে ইথারে ভাসবে
জীবনের প্রয়োজনে জীবনের সকল হাহাকার।


               সরফরাজ


সরফরাজ ফিরে এসো একবার
দ্যাখে যাও আবার জীবনের গ্যাঞ্জাম
চেনা সবপথ হারিয়ে গেলেও;
জীবনের ব্যঞ্জনাগুলো
আগের মতই তুলে নীলাভ ঝঙ্কার
হাজারও অট্টহাসি মিলিয়ে
যেতে চায় বিজনে
সরফরাজ ফিরে এসো গোপনে
অনেকগুলো স্বনির্ভর মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা
অপেক্ষা করছে জীবনের উঠোনে
সরফরাজ  ফিরে এসো এখানে


মাটির প্রেমে এতই মজেছো বুঝি!
মত্ত রয়েছো দ্বিধাহীন প্রাচীন সঙ্গমে
সে যে নিস্তব্ধ কালোমেঘ বুকে ধারন
করে চলে গেলে সরফরাজ
কই! আরতো ফিরে এলে না
আমাদের আড্ডায়
বোকা হেলেনা এখনও তোমার কথা বলে
বলে ছেলেটি কত সুখিইনা ছিলো জীবনে!


অথচ কত গরল ধারন করেইনা
নীলকণ্ঠ হয়েছো তুমি
আকাশের নীলও টের পায় নি!
ভেতরের পাথরগুলোকে নাচাতে
যখন
তখন মাঝেমাঝে আমিও ভাবতাম
কত সুখে এত হাসি আসেরে দুচোখে


জীবনের পথেপথে সীমান্ত কাঁটাতার
দলে যেতে সবার অলক্ষ্যে
নির্ঘুম বিডিআর, বিএসএফের
চোখ ফাঁকি দিয়ে কতপথ পাড়ি দিয়েছো সন্তর্পনে কতদূরইনা এগিয়েছো সরফরাজ!


পেশাদার মাটিয়ালের মত জীবনের
বোঝাকে টেনে এনেছিলে এতদূর
কৃতির স্বাক্ষর এঁকেছিলে জীবনবৃক্ষে
কতটা অভিমানি হলে এতককিছু ফেলে;
চলে যেতে পারে মানুষ!
কতটা কষ্টে মানুষ নিবিষ্ট হয় মৃত্যুর সিথানে


কতটা স্বনির্ভর মৃত্যু চাইতে তুমি
একবারও বলোনিতো কাউকে!
আমাকে বলো নি সে ভালো কথা
জানতাম অনুপমাকেতো ভালোবাসতে তুমি
তাকেও দেখতে দিলে না
হৃদয় রাঙিয়েছো কতটা নীলরঙে।


         জল নূপুরের আওয়াজ


তোমার অভাবে বিরহের কবিতা লিখে
কাটিয়ে দিয়েছি সাতাশটি দগদগে মার্চ
শিলং গোহাটিতে এতদিনে নিশ্চয়
বাবার কাপড়ের ব্যবসাটা তোমার জমে উঠেছে বেশ
এদিকে তোমার তৃষ্ণায় শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে
আমার জলজ শরীর
তোমাকে পাবো বলেই আর
কারো কাছে ধর্ণা দিতে যাইনি
তাইতো হিমাদ্রির মত গলেছি অবিরত
তোমার স্মৃতির  উনুনে
চাতক মরে যায় অজানা পাতকে
আমি মরছি না কোনো অজুহাতে
ভেবেছি আরেকটি জলন্ত একাত্তর এলে
যুদ্ধে চলে যাবো নির্ভয়ে


আমি অবচেতনে তোমার আওয়াজ শুনি!
কান খুলে দেখি একি!
দূরের বাগানে অচেনা অনুপ্রাসে মেতেছে
শুকনো পাতার দল
আমি ক্রমেই আহত হই জল নূপুরের বিশুদ্ধ আওয়াজে।


            সর্বনাশের সংজ্ঞা


ব্যাংক ডুবিয়ে নৌকা ভাসায়!
তার উপরে বোঝাই ;
সোনালী আঁশের লাশ
আর কতটা কী হলে তারে
বলবো সর্বনাশ!


                 মুক্তির ঘ্রাণ


জীবনের চোখে অলৌকিক প্রিজমা নাচে
হাসে ঝলসানো মুখ
নাবিক চেয়ে আছে দূরের আকাশে;
ভাসে যদি একঝাঁক বিহঙ্গপুঙ্গব
অশরীরি ক্ষমতায় বেঁচে যায়
আরও কিছু প্রাণ
নাসারন্ধ্রে ভেসে আসে মুক্তির ঘ্রাণ


             মার্চের উত্তাপ


এখনতো আমরা মার্চের উত্তাপ গায়ে
মেখে আরামছে গড়াগড়ি খাই


অচথ একদিন মার্চ এসেছিলো
ঘুমন্ত বাঙালিকে জাগিয়ে রক্তের নেশা ধরাতে
এসেছিলো মার্চ অধিকার বঞ্চিতের শেষ
ভরসা হয়ে
মার্চ এসেছিলো আঠারো মিনিটের এক মহাকাব্য শোনাতে
মার্চতো এসেছিলো একটি জন্মযুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে!


এখনও মার্চ আসে মার্চ যায় কারোই কিছু
যায় আসে না
প্রতিবাদী চেতনার বদলে শাসকের
স্তুতি গেয়ে দিন কাটে এদের
দিনশেষে;
শাসক নামক প্রভূদের চোখরাঙানি
খেয়েই ঘুমিয়ে থাকে এখনকার জনতা


                  অন্যকথা


এই যে কর্মমুখর রোজনামচা
কর্পোরেট দায়ভার
জীবনের ঘানি
সাংসারিক টানাটানি
দায়িত্বের পাহাড়
ফাইলের স্তুপে ধুলার আস্তরণ
বসের ধমকানি
হায় হ্যালো জানাজানি
বিবেকের চোখরাঙানি
একদিন চুপিসারে
ছুটির ঘন্টা বাজবে ইথারে
শুধুই টেবিলের কোণে
নীরবে নির্জনে
বেঁচে থাকবে এইসব
আলোর মুখ না দেখা অভিমান


            জীবন মঞ্চ


আগামীকালের কথা বলছো!
আগেই জীবনের মঞ্চে অভিনয় করার
সিডিউল নেয়া আছে
কাল আমি প্রভূর পার্ট নেবো
আমার বন্ধু মিঠুন নেবে কুকুরের পার্ট


আমি কিছু খাবার দেবো
মিঠুন চাটতে থাকবে
মিঠুন চাটতে থাকবেতো আমি খাবার দেবো
আবার চাটনি! আবার খাবার!
আবার খাবারতো! আবার চাটনি!
একসময় মনের খেয়ালে
লাথাতে লাথাতে মিঠুন-কে রেসলারের মত
মঞ্চ থেকে ছুড়ে ফেলবো আমি
মিঠুন আবারও মঞ্চে উঠে আমায় চাটবে
আমি পরম প্রভূ-সুখে  অট্টহাসিতে হাসবো
মিঠুন লেজ গুটিয়ে সযতনে আমায় দেখবে
কালকের দিনটা এভাবেই কাটবে বোধ হয়!