এমন সোনার বরন মেয়েরে বাপু
ক্যামনে কাটিলো'গো সাপে?
কি এমন দোষ ছিলো তার!
ধরিলো কি আমারই কোনো পাপে!
কারো ধন মারিয়া খাই নাই
খোদার ঘরে হাজিরা দিয়াছি
ভোর দুপুর কিংবা রাতে,


এমন'ই করিয়া রোনাজারি
আহাজারি করিয়া চলছে
সাজু মণ্ডল; শিমু মণ্ডলের বাপে।
বুকের ভেতরে হাহাকার শুধু
মরছে শোক আর অজানা অনুতাপে!


চেলেছিলুম আমি মেয়ে আমার
বিয়ে দেবো এবার করলে বিএ পাশ
সোনার বরন নীল হলো তার বাপু
হায়!
সাপে কাটিয়া করিলো বুঝি সব নাশ!
মেয়ে আমার চাইতো ছুঁতে
দূরের ঐ নীলাকাশ।
বলতো পুলিশের বড় বাপু হবে সে
দেশের অপরাধ করিবে নাশ।


স্বপ্ন তাহার ভেঙে গেলো হায়
বদন খানা হলো নীল
হৃদয় সাগরে মোর বান ডেকেছে
বাপু কেমনে লাগাই খিল!


গত সনেও বান এয়েছিলো বাপু,
তয়,বানের জল আমার
বাড়ী আসে নাই,
উঁচা করে বেঁধেছি ঘরের ভিটে
বাড়ীও উঁচা তেমনটাই।।


এবার বানে বাঁধ নাহি মানে
উঁচা নিচা নাই ভেদাভেদ,
এক এক ঢেউ আছড়াইয়া
পড়ে ঘোলাটে কিংবা সফেদ।
দশ বিঘে আঁখ ডুবালো
বাপু,আট বিঘে পান
এক বিঘে বীজতলা ডুবালো
ক্যামনে বুনিবো ধান!!


বহু কষ্টে মেনে নিলুম সবই
প্রবোধ দিলাম মনে
সামনের বছরে সবই হবে
আবার বেঁচে যদি থাকি প্রাণে।


ধানের কল ভাসিয়া গেলো বাপু
ভাসিয়া গেলো গুড়ের কল
মনের দুয়ারে বাধ দিলেও
মানে না চোখের জল।
এতো কিছুও হারিয়েও বাপু
হারাইনি কো মনোবল,
সোনার বদন মেয়ের পানে চাহিয়া
মুছে ফেলি চোখের জল।
দুই দিন অভুক্ত ছিলেম বাপু
পাইনি কো খাওয়ার জল,
চারিদিকে বাপু থৈ থৈ
করে সাত সাগরের জল।।


শুকনো চিঁড়া,শুকনো
মুড়ি আর কিছু খাওয়ার জল,
গতকাল বাপু দিয়া গেলো
মোরে রিলিফের একটা দল।।
একদিনের খাবার তিন দিনে খাইবো
করিবো নিজের সাথেই ছল,
আমার খাওন মেয়েরেই খাওয়াইয়া;
বাঁচিবো যদি গো পাই থল কূল।


গত রাতেই বানের পানি
বাপু এতই গেলো বেড়ে,
আগল ভাঙিয়া সাগর ঢুকিলো
আমাদের থাকার ঘরে।
শুধু খাটের উপর দখল
করে নি সর্বনাশা বানে,
সর্বনাশ যে ঢুকিলো তখই বাপুগো
কে বা ক্যামনে জানে!!


মধ্য রাতে হঠাৎ করিয়া বাপু
শুনিলাম এক চিৎকার।
"সাপে কাটিলো আমারে বাজান"
মেয়ে আমার কাঁপে যে থরথর।।


নিঠুর সাপে পায়ের গোড়ালিতে
বসাইলো মরণ কামড়,
দগদগে সেই কামড়ের চিহ্ন
এখনো চক্ষে ভাসে যে মোর।
এত রাতে কি করি হায়!
যাইবা এখন কোথায়!
চারিদিকে ধু ধু মরুভূমি!
থল কুলতো আর নাই।
মেয়ের বুদ্ধিতেই মেয়ের পায়েতে
দিলাম কষে এক বান
কোনোভাবে যদি যায় গো বাঁচানো!
মোর সোনার মেয়েটার প্রাণ।
দা খানি লইয়া সাঁতরাইয়া
সাঁতরাইয়া গেলাম কলার বনে,
কলাগাছের ভেলা বানাইয়া
ভাসাইবো মরার বানে।
ওঝা বৈদ্য ডাক্তার কবিরাজ
যাহা পাই যেখানে!


কলার বাগান কোথায় গেলো!
রইলো যে কোন বনে!
নাম নিশানা নাই কোথাও
মনেরে বুঝাই ক্যামনে!
ব্যর্থ মনোরথে ফিরিয়া
আসিলাম আবার ঘরের পানে।
আসিয়া দেখিলাম সোনার মেয়ে
শিমু আমার নেই আর ধরাধামে
শঙ্খনাগে দংশিল কি! তারে
দংশিল কি কাল নাগে?
নাড়িয়া চাড়িয়া দেখিলাম কত
বাপু মেয়ে যদি মোর জাগে!
সোনার বরন মেয়ের বদন
যখন'ই দেখিলাম নীল
বুঝিলাম বাপু তখন'ই
মেয়ে মোরে ছাড়িয়া গিয়াছে
ছাড়িয়াছে এই দুনিয়া লিখিল।


গত বছর মেয়ের মা মরিলো
বাপু গো বাঁচাইতে পারিনাই  
আমার সর্বস্বও ঢেলে,
মনের কোণেতে এখনো বাপু
দুখ সাগরের ঢেউ মাতম তোলে।
মা তাহার ছাড়িলো আমায়
হায় দুরারোগ্য ক্যান্সারে
মেয়েটি আমার শেষ ভরসা ছিলো------
সেও মোরে ছাড়িয়া গেলো বুঝি
সর্বনাশা বানে
আর কাল সাপের কামড়ে!


জীবন সাগরে একা একা হাতড়াইতেছি
সাঁতার গিয়াছি যে ভুলে
ক্যামন করিয়া পাড়ি দেবো বাপু
যাইবো ক্যামনে ঐ কূলে!