গলির মোড়ে জল জমেছে,
কোলকাতার বৃষ্টিতে, এমন কি নতুন হয়েছে !
সাদা মস্ত বড় গাড়ি, ঈদের আগের দিনের
ভীড় বাজারে , ঐ মোড়েই দাঁড়িয়ে আছে।


মোড়ের থেকে খানিক ভিতরে,
এক অপূর্ব সুন্দরী তরুণী মায়ের সাথে মান করছে- "আম্মি তোমার বিরায়ানি-
বিরবল বানাতো বুঝি; দেরী হচ্ছে,
ভোরে খাবো, কথা দিচ্ছি-এখন না গেলে কাজে, ভয়ংকর দেরী হয়ে যাবে যে। আব্বুকে খাইয়ে দিও, দেখো, তোমাকে আদর করে বেগম ডাকবে। এবার আসছি- চিন্তা করো, ভোরে কি ঈদি দেবে।"


আজকের বিকেলটা কি দারুণ,
শুনেছি ঐ বামুন পাড়ায় রথ-
আর তার পাড়ায়, ঈদে সেজেছে পথ।
তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠে,
তারপর ব্যাগ থেকে, বের করে রং, তুলি,
পাউডার, ক্রীম, ফিতে, কাটা বের করে
মনের মত করে সাজে।

খুব খুশি সে, মনে ভাবে- আল্লাহা নেক, তাঁর
নেকি আমরা কি করে বুঝি -
বারো বছর আগে, আব্বুর প্রথম যায় চাকরি,
শুরু হয় রক্তচাপ, সুগার, হার্টের অসুখ সবগুলোর ইলাজ দামী।
তখন যদি পাওয়া না যেত, এই কাজটি
মামুর সিফারিসে- কি দুর্দশাগ্রস্ত হত সবাই সত্যি !
ভাই হামিদ, বোন নসিমাকে, কি করে পালতো
সেলাই মেশিনের কাজ করে একা আম্মী।


এবার আব্বুকে বড় কোন হাসপাতালে,
ভাই  হামিদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার,
ব্যবস্থা করতেই হবে।
নাসিমার জন্যে,পরের ঈদে ভালো
একজন দুলহা ভাই খুঁজতেই হবে।
কি দারুণ ইংরেজি বলে, ওই বিষয় নিয়েই
যে ও পড়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে।


আরো কি সব ভাবছিল,
কিন্তু ব্যাঘাত হল গাড়ির ড্রাইভার সোনার বাংলার পার্কিয়ে গাড়ি  থামিয়ে বলে-
"যাও আপু, বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছে।"


ঠিক- দেরী হয়ে গেল, বলতে আম্মীকে;
সাকিল মামু ঈদের দিনে,বন্ধ ঘরে
জন্নত দেখানোর নামে কি করে!
ঠিক -দেরী হয়ে গেল, বলতে আব্বুকে;
চাচা সালেম, রোজ রাতে কেন ওষুধ
কেনার জন্য টাকা দিতেন, আম্মীকে নিজের
খালি বাড়িতে ডেকে!
ঠিক - দেরী হয়ে গেল, বলতে আসফাককে;
কেন চর মেরেছিল, তিন বছর আগে-
যখন একটু চমু চেয়েছিল দুবাই যাওয়ার আগে।
ও যে প্রথম ভালোবাসা আসফাকের,
কিন্তু ঐ ঠোঁটকে তো কতজন ছিন্নবিচ্ছিন্ন
করেছে- রাতের পর রাত, কাড়াকাড়ি করে।
সেও তো ভালোবাসাকে ভালোবাসে,
বেঁচে আছে আম্মী, আব্বু, বোন, ভাই,
আসফাকের জন্যে।


বাকি প্রতি রাতে, মাংসের ঢল নামে
বড়, বড়, আধো আলোর ঘরের বিছানাতে ।
শরীর জ্বলে উঠে, টাকার দিয়ে রাতের চিত্রনাট্য
ভাগ্য লিখে- বিশ্বাস, ভালোবাসা, সোহাগ,
আদরের মত অনুভূতিকে রোজ ভোরে,
ফেরার পথে, বাড়ির পাশের কবরস্থানে
সালাম ঠুকে আসে।
তা যাইহোক, খানিক ভেবে, চকচকে মেয়ে
কামিনী, যামিনী, নুরী, পরী সেজে বেরিয়ে
বেঁচে থাকার লড়াইতে-


যদিও চেনা খুব কঠিন ওকে, বা ওদের মত
সবাইকে ,
যারা রাতের রাণী- সুন্দরী নারী সেজে,
প্রতি রাতে বদলায় ওদের নাম, একই চরিত্রে।
সালমা, সীমা, জুলি, শাকিনা বেবি বা শুধুই একটি নম্বর বেনামী- সব খদ্দর বুঝে!
এদের জীবন কুরবানী, আল্লার নেক নজরে ।
=================================