কিছুদিন আগে এডমিনের দেয়া তথ্যে জানতে পারলাম যে,আসরে প্রকাশিত কবিতার সংখ্যা পঞ্চাশ হাজার পূর্ণ হয়েছে।এটি নিঃসন্দেহে আমাদের সবার জন্য একটি আনন্দের সংবাদ।কেউ কবিতা লিখছেন তার মানে তিনি মহৎ কিছু করছেন।কবি ও কবিতার বিস্তৃতি যত হবে মনুষ্যত্বের বিকাশ তত ঘটবে।তত আমরা উদার ও সহন শীল হব।আমাদের ভেতরের হিংসা বিদ্বেষ ও গ্লানি দূর হবে।কেননা কবিতার রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে তাকে পবিত্র আত্বা নিয়েই প্রবেশ করতে হয়।অপবিত্র আত্বায় কবিতা কখনও বিম্বিত হয়না,মুদ্রিত হয়না।সেদিন ফেসবুকে দেখলাম একজন একটু রসিকতা করেই লিখেছেন যে "বাংলাদেশে যত কবি আছে তাদের সংখ্যা যোগ করলে তা চীন কিংবা রাশিয়ার জনসংখ্যার চেয়ে বেশি হবে"।কথাটা যে অর্থেই বলা হোক আমি বিশ্বাস করি কবি বাড়ছে মানেই সমাজে সুবিবেচক ও মননশীল মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।কবিতার চেয়ে মানবিক আর কি আছে ?


কবিরা ভোরের আলোর মত নির্মল।কবিরা ফুলের মত সুন্দর।কবিরাই স্বপ্ন দেখে সাম্যের ও ভালবাসাময় পৃথিবীর।কবিরাই বলে মানের চেয়ে মন বড়,ভোগের চেয়ে বিসর্জন বড়।একজন মনিষী বলেছেন পৃথিবীর সমস্ত মানুষের সব মাথার চেয়ে একটি মহৎ হৃদয়ের দাম অনেক বেশি।কবিদের আছে সেই মহৎ হৃদয়।


এই আসর ছাড়াও আরও অন্যান্য সাইট ও ব্লগে প্রতিনিয়ত অজস্র কবিতা প্রকাশিত হচ্ছে।একুশে বইমেলায় প্রতিবছর প্রায় হাজার খানেক কবিতার বই প্রকাশিত হয়।কিন্তু হতাশার কথা হচ্ছে আমাদের কবিতা টিকছেনা সময়ের স্রোতে।তা ভেসে যাচ্ছে।অথচ ভাল কবিতা যে লেখা হচ্ছে না তা কিন্তু নয়।অনেকেই খুব উচ্চমানের কবিতা লিখছেন।তাহলে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি কেন?এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে যা মনে করি তা হল বর্তমানকালের কবিতায় ভাবের চেয়ে অলঙ্কার বড় বেড়ে গেছে।কবিতা এখন আর পল্লী কিশোরীর মত সহজ,সরল ও শুধু কানে দুটি ঝুমকা দুলে নেই।কবিতার শরীরে প্রতিনিয়ত এখন নব বধূর সাজ।তার শরীরে এত অলঙ্কার যে বুঝার উপায় নেই তার সত্যিকারের রঙ কি।তার রূপটা  কেমন।অনেকেই বলেন যে আধুনিক কবিতা দুর্বোধ্যতার দোষে দুষ্ট।কথাটা সব সময় ঠিক না হলেও একেবারে মিথ্যে নয়।কবিতায় এখন মূলত আবেগের চেয়ে জ্ঞানকে,পান্ডিত্যকে প্রকাশ করা হচ্ছে বেশি।যে কবিতা মনকে দোলা দেয়না সে কবিতা যতই অলঙ্কারময় হোক না কেন মানুষ কেন তা মনে রাখবে?


আমার মনে হয় আমাদের লেখায় নিজস্ব স্টাইলের বড় অভাব।সেদিন পত্রিকায় এক সমালোচক লিখেছেন,দশটি আধুনিক কবিতা পড়লে প্রায়ই মনে হয় কবিতা গুলো একই বিষয়ের উপর লেখা।মাঝে মাঝে এও মনে হয় দশটি কবিতা মনে হয় এক জনই লিখেছেন।কেন এমন হচ্ছে?কেন অমর বাণী আমাদের কলম দিয়ে বের হচ্ছে না।যেমন বের হয়েছিল নজরুলের কবিতায়,রবীন্দ্রনাথের কবিতায়,জীবনানন্দের কবিতায়।মূলত নতুন ভাব প্রকাশ করা কবিতার আসল উদ্দেশ্য নয়।পুরনো ভাবকে যিনি নতুন করে বলতে পারেন তিনিই জাত কবি।সাম্যবাদী,বিদ্রোহী,অনন্ত প্রেম,দান,বনলতা সেন প্রভৃতি কবিতায় নতুন ভাব যতটা আছে তার চেয়ে আছে বেশি নতুন করে,আলাদা করে বলার প্রক্রিয়া।তাই এসব কবিতা চিরকালের পাঠক ভালবেসে আপন করে নিয়েছে।


প্রতিদিন কবিতা লিখলেই কবিতার যথার্থ চর্চা হয় না।তার জন্য চাই আরও কিছু।চাই মগ্ন সত্ত্বা,গভীর জীবনবোধ।আসরে পঞ্চাশ হাজার কবিতার মধ্যে কতটি কবিতা আছে যা পাঠক পড়ে ভেবেছে,আরে এমন করে আগেতো কেউ বলেনি।কতটি কবিতা সময়ের পরীক্ষায় টিকে আছে বা টিকবে।বিদ্রোহী,বনলতা,গীতাঞ্জলি,নকশী কাঁথার মাঠ ইত্যাদি কবিতার মত বা তার কাছাকাছি কতটি কবিতা সাড়া ফেলেছে?


অনেকেই বলেন এখন লোকে কবিতা পড়ে না।ভুল।কবিতার পাঠক চিরকালই কম ছিল।আমি কাউকে ছোট করছিনা।আসরে আমারও শ'খানেক কবিতা আছে।আমাদের সবার ভাবা উচিৎ এ ব্যাপারে।গাছের পাতা কেউ দেখে না।ফুলটাই নজরে আসে।আমাদের কবিতা পাতার আচ্ছাদনে পুলকিত পুষ্প হয়ে উঠুক।



(কাউকে আঘাত করে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী)