বিমূর্ত ভাব আধুনিক কবিতার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।যে ভাব দিয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবন চালিত হয়,মানুষের লেনদেন,হাসি কান্নার মধ্য দিয়ে যে ভাব প্রকাশিত হয় তার চেয়ে বহু উচ্চে এই ভাব।অনেকটা  abstract শিল্পকর্মের মত।যার সাথে জীবনের যোগাযোগ কম।থাকলেও প্রকাশমান নয়।অনেকেই বলেন কবিতায় ফুল,চাঁদ,তারা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে উপমার দিন শেষ।এসব ব্যাপারকে অনেকেই অনাধুনিকও মনে করেন।বর্তমান কালের গানের লিরিক্সেও একই ধরনের ব্যাপার খেয়াল করা যায়।এমন ভাবই আজকাল কবিতায় বেশি পাওয়া যায় যা সহজে বুঝা যায়না।এটা পরিমিত পর্যায়ে অবশ্যই ভাল।কিন্তু তা বেশি পরিমানে থাকলে কবিতা একঘেয়ে হয়ে যায়।


বর্তমান কালের কবিদের অন্যতম আদর্শ কবি জীবনানন্দ দাশ।তিনি এক শীতল অনুভবের কবি।জীবনানন্দের কবিতা রহস্যে আবৃত হলেও তার ভাব কিন্তু জীবন,মৃত্যু ও প্রকৃতিকে নিয়ে।তার কবিতা অতি সহজেই মনকে এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়।হয়তো দূরের সে পথ পুরোপুরি দেখা যায়না,কিন্তু বুঝা যায় তার পরও কিছু আছে চলার জন্য।আর এইখানেই কবিতার সার্থকতা।কবিতা এমন ভাবের সন্ধান দেবে যা পুরোটা প্রকাশমান নয়,কিছুটা পাঠক অনুমান করে নেবে।কিন্তু ব্যাপারটা যদি এমন হয়, কবিতার শরীরে যদি পাথর সমান রহস্যের পর্দা থাকে তবে তা কবিতার জন্য কতটা মঙ্গলজনক আমার জানা নেই।সে কবিতা সাধারণ পাঠক হিসেবে আমি পড়তে চাই না।


রবীন্দ্রনাথ বলেছেন "সহজ কথা যায়না বলা সহজে"।মূলত কাল্পনিক বিষয়ে লেখা যতটা সহজ জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয় নিয়ে লেখা ততোটাই কঠিন।কারন জীবনকে উপলব্ধি করলেই না তা নিয়ে লেখা যায়।আর কল্পনার ঘোড়াতো ইচ্ছেমতো চালালেই হল।এক দিকে গিয়ে ঠেকবেই সে।আমি মনে করি ভাব যাদের নেই তারাই দুর্ভাবকে টেনে আনেন।কবিতায় এই বিমূর্ত ভাব অনেকটা তরকারিতে লবণ,মরিচ ও মসলার মত।যার ব্যবহারে খাবার সুস্বাদু হয় আবার বেশি ব্যবহারে তা মুখেই নেয়া যায়না।


ইংরেজি শব্দ  ব্যবহার আজকালের কবিতায় অহরহই দেখা যায়।বিভিন্ন দেশের প্রসিদ্ধ স্থানের নাম,নদী,উপত্যকা,রাস্তাও ভবনের নাম কবিতায় বেশ দেখা যায়।এটা খারাপ দিক নয়।তবে মনে রাখতে হবে যেন তা কবিতার ভাবকে ছাড়িয়ে শুধু তথ্যময় না হয়ে উঠে।যান্ত্রিক না হয়ে উঠে।যান্ত্রিক কবিতা বেশি দিন টিকে থাকেনা।


বৃক্ষের অন্যতম উদ্দেশ্য আকাশের দিকে উঠা।ডালপালা প্রসারিত করা।কিন্তু  তার মূল কিন্তু থাকে মাটিতে।সেখান থেকেই সে মূল খাবারটা পায়।আবার উপযুক্ত পরিমান পাতাও থাকতে হয় সালোক সংশ্লেষণের জন্য।তবে মূল ছাড়া কিন্তু বৃক্ষ বাঁচে না।


অতএব কবিতায় ফুল,তারা,চাঁদ চিরদিনই পাঠককে মুগ্ধ করবে।এদের ছেড়ে নয় বরং এদের নিয়েই আমরা নক্ষত্রের পানে ছুটব।কিন্তু ভূমন্ডল থেকে বিচ্ছিন্ন হব না।