ছেলে বেলায় যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম
বাঁশের লাঠিকে বন্দুক বানিয়ে ঢিসুম ঢিসুম
পটকা ফুটাতাম আর আরেকদল কে গুলি করে করে তাড়িয়ে ফিরতাম।
বাড়িতে ফেরার পথে সহপাঠীদের বলতাম আজ যুদ্ধ যুদ্ধ খেললাম,
কাল আবার খেলব ।


তখন ও যুদ্ধ বুঝি না
দ্বন্দ্ব বুঝি না শুধু বুঝি আমার ছোট খেলার মাঠ
পড়ার টেবিল আর বাবা মায়ের কড়া শাসন,
শুধু ভাবতাম যুদ্ধ বুঝি গুলি গুলি খেলা আর
চিৎকার কোলাহল আর কি কি যেন!


বাবাকে জিজ্ঞেস করতাম
বাবা বলতেন- শোষণের বিরুদ্ধে অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজেদের অধিকার আর দাবী আদায়
এবং মাতৃভূমির জন্য লড়াই,
বাবার কথাগুলো মুখস্থ করতাম আর লিখতাম,
তখন যুদ্ধ বুঝি না ।


বাবাকে আবার জিজ্ঞেস করতাম বাবা যুদ্ধ কেমন হয় দেখতে
যুদ্ধে কি কি লাগে কারা কারা যেতে পারে ?
বাবা বলতেন- ধর আমাদের এই বাড়ি জমা জমি সব কিছু
তোমাদের পাশের গ্রামের একজন জোর করে নিয়ে গেল ?
তখন তুমি কি করবে ?
বললাম নিতে দিব না, আমাদের টা উনি কেন নিবেন ?
ধর উনি উনার টা থাকার পরেও আমাদের টা নিবেন ,
আমি বললাম আমি বাধা দেব, চাপ দিব, দখল করতে দিব না ।
বাবা বললেন এই তো তুমি যুদ্ধ বুঝেছ,


৫২ দেখিনি ৭১ দেখিনি
তবুও হ্রদয়ে লালন করি ধারণ করি মহান এই মুক্তিযুদ্ধ ,
আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা,
মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন,
সেক্টর ৬/এ অঞ্চলে উইং কমান্ডার খাদেমুল বাশারের অধীনে দিনাজপুর পঞ্চগড় এলাকায় যুদ্ধরত ছিলেন,
বাবা আজ বেঁচে নেই, বেশ কয়েক বছর আগে আমাদের ছেড়ে গেছেন,
বেঁচে থাকলে বাবা কে বলতাম বাবা !
আজ আমি যুদ্ধ বুঝি
বাবার কাছে একাত্তরের গল্প শুনতাম,
শুনতাম কিভাবে গাড়ির সিলিন্ডার কেটে কেটে
বিকট শব্দ বানিয়ে এক সাথে অসংখ্য গাড়ি কে প্রথম গিয়ারে দিয়ে বিকট শব্দে শব্দে পঞ্চগড় জেলাকে হানাদার মুক্ত করেছেন !


সেই বাবার সন্তান আমি তাই তো অনেক গর্ব আমার ,
বুক ভরে যায় আহ্লাদে আবেগে যখন দেখি- বাবার সেক্টর কমান্ডার তার নিজ হাতে লিখেছেন-he is extremely honest & his contribution for the country during liberation war will remain ever fresh ,


সেই বাবার সন্তান আমি যে বাবা যুদ্ধ করেছেন নিশঙ্ক চিত্তে দেশ কে ভালবেসে ,এর চেয়ে মহান আর কি হতে পারে ?


(উৎসর্গ – আমার মহান পিতা প্রয়াত মোঃ নুরুল ইসলাম দেওয়ান কে যিনি একজন দেশপ্রেমিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা)