একদিন একশো অশ্বশক্তির উত্‍সাহ নিয়ে  
কাছে এসেছিলে তুমি ।
তোমার বেহায়া ভালোবাসায়
ডালে বসা একঝাক পাখী পালিয়ে গিয়েছিলো লজ্জায়।
তুমি আমায় ভালোবাস খুব ভালোবাস,  
তাই আমার জন্য তোমার হৃদপিণ্ডটাও
দিতে রাজি আছো তুমি।
গঙ্গার বুকে জেগে ওঠা ছোট্ট সবুজ দ্বীপটা
দেখিয়ে বলেছিলে আমায়  –
তোমাকে নিয়ে ঘর বাধাবো ঐ নির্জন নিরালায়
তারপর কাটাবো সময় তুমি আর আমি ।
আরো বলেছিলে-
পুর্ণিমা রাতে গঙ্গার স্রোতে ভাসাবো তরী
যদি তুমি চাও।
তোমার ঘর বাধার স্বপ্ন
আমাকে মুগ্ধ করেছিলো।
তোমার ভালোবাসায়
আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।
তখনও বুঝতে পারিনি তোমার কপট প্রেমের জোয়ারে
ভাসতে ভাসতে আমি চোরাবালির তলায় তলিয়ে যাচ্ছি।
আমি বুঝতে পারিনি-
আমার চেয়ে আমার উন্মুক্ত শরীরটাকে বেশি ভালোবাস তুমি  
বেশি করে পেতে চাও।
তোমার অন্যায় আবদারের কাছে মাথা নত করিনি বলে
মোবাইলে একটা ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলে -
ভুলে যাও ভুলে যাও আমায় , আমিও তোমাকে ভুলতে চাই।
হায় পুরুষ,
তুমি হয়তো অনায়াসেই ভুলতে পারো সবকিছু
কারণ, পুরুষ বলে হয়তো
সমাজে সে অধিকার তোমার আছে।
আর আমি ?
আমি তো এক সামান্যা নারী-
তাই আমি সহজেই কী সবকিছু ভুলতে পারি?
কী করে ভুলবো বলো ?
আমি তো তোমাকে মনেপ্রাণে ভালোবেসেছিলাম-
তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম।

হয়তো জানো না,
সেই ম্যাসেজটা পাওয়ার পরে  
পৃথিবীটাকে বড় অন্ধকার বলে মনে হয়েছিল,
জীবনটাকে বড় মূল্যহীন ।
হতাশায় নিরাশায় দু:খে কষ্টে
একবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম।  
কিন্তু পারিনি-
আমি আত্মহত্যা করতে পারিনি
সেই আদিবাসী প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবে ।
যাদের জন্য হয়তো আজও বেছে আছি আমি।
আমার আনন্দ-
নেশায় বুদ হয়ে থাকা কিছু মানুষকে
আমি ঘরমুখো করতে পেড়েছি,
এখন ডাইনি অপবাদ নিয়ে আর মরতে হয় না কাউকে।
এটাই হয়তো আমার কাজের সার্থকতা।
যাকগে ওসব কথা-
কিন্তু তুমি এদেরকেই ত্যাগ করতে বলেছিলে একদিন  
আমি কিন্তু ওদেরকে ত্যাগ করিনি কোনদিন -
আমি তো ওদের মাঝে নতুন করে বেচে আছি ।

তোমার আরো অভিযোগ –
আমার মতাদর্শের জন্য নাকি তোমার প্রাইমারি
স্কুলের চাকরিটা হয়নি।
আমি ওদের সঙ্গে আছি বলে তোমার সন্মানে লাগে।
হায়রে সন্মানয়ালা,
যখন নেতাদের তাবেদারি করে
শ্বশুরের কাছে হাত পেতে টাকা নিয়ে চাকরিটা কিনেছিলে?
তখন তোমার সন্মানটা কোথায় ছিলো?
ধিক্কার তোমার সেই সন্মানকে
ঘৃণা করি তোমার মানসিকতাকে ।

আমার সৌভাগ্য-
তোমার সাথে আমায় ঘর করতে হয়নি।  
শুধু ভাবি- যাকে নিয়ে ঘর করছো তুমি
জানি না সে কেমন আছে
হয়তো ভালো আছে,
হয়তো বা তোমার সব আব্দার মেনে নিয়ে মানিয়ে আছে...
তবে কামনা করি সে ভালো থাকুক,
তুমিও ভালো থাকো ।

আজ বহু দিন পরে
বসে আছি সেই গাছের তলায়  
যেখানে বসতাম তুমি আর আমি।
কত কথা পড়ছে মনে কতকাল পরে-
জীবনের সেই দিনগুলি...
যা কিছু অতীত  
আজ তা ভাসিয়ে দিলাম গঙ্গাজলে ।
আর গ্লানি নেই আর কোন দুখ নেই
হয়তো সেই পাখীগুলো আর নেই এই গাছের শাখায়।  
একদিন যারা পালিয়েছিল লজ্জায়।

আমার জীবনের এই পড়ন্ত বেলায়,
পেয়েছি খুজে একমুঠো সোনালী রোদ্দুর,
যার মাঝে দেখেছি আমি আমার সুখের মরণ।
তাকে আমি ভালবাসি-
ভীষণ ভালোবাসি আমি ।
জানো ,সেও আমাকে খুব ভালোবাসে
বড় ভালোবাসে-
তাইতো কিডনি দিয়ে বাচিয়েছে আমায়।
সে যে আমার একান্ত আপন
আমার মনের মানুষ;  
তার বুকে মাথা রেখে আজীবন বাচতে চাই আমি।
বাচতে চাই আমি
তার হৃদয়ের মাঝে এই সুন্দর ভুবনে।
---/----