আত্ততা, বন্ধু আমার,
অনেক কিছু পাওয়ার ছিল তোমার
পাওনি; হাজারো বঞ্ছনার পরে অভিশাপ দেওয়ার কথা ছিল,
দাওনি; বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচার চাওয়ার কথা ছিল, চাওনি;
অধিকার আদায় করার কথা ছিল কড়ায়গণ্ডায়, নাওনি।
তোমার পাওয়ার ছিল স্বপ্ন সুখের ঘর, সাজানো সংসার; বন্ধু আমার।
তোমার পাওয়ার ছিল স্বামীর সোহাগ, সন্তান;
নারীত্বের অমৃত স্বাদ- মা ডাক;
গর্বিত সন্তানের জননী হওয়ার কথা ছিল।
সমাজে সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি হওয়ারও কথা ছিল, আত্ততা। আর দশজন নারীর মতন
বধূ থেকে শ্বাশুড়ি হওয়ার কথা ছিল,
চাবীর গোছা আঁচলে বেঁধে কর্তৃত্ব নেওয়ার কথা ছিল, তুমি কিছুই করতে পারোনি, কিছুই পাওনি।


তুমি শুধু সুবিচারের আশায় আত্মীয়-স্বজনের বাসায় নিরব অশ্রু বিসর্জন দিলে, যাঁদের শুভাকাঙ্ক্ষী ভেবেছিলে
তাঁদের দ্বারস্থ হলে।
তুমি বলো, কি পেলে?
কেউ কি তোমার জন্য কিছু করেছিল?
লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপমান, অপদস্ত
ভাগ্য লিখন হয়ে গেল।
দীর্ঘ অর্ধযুগ পরগাছার মত বেঁচেছিলে।
অবশেষে বিধ্বস্ত তুমি রণে ভঙ্গ দিলে,
মাথা নিচু করে নিজেকে আড়ালে নিলে,
সব অধিকার ছেড়ে নির্বাসনে গেলে।
অথচ এমন হওয়ার কথা ছিল না, আত্ততা।


এভাবে চলে গেছে তিনটি দশক,
জীবনের অর্ধেক সময়। আত্ততা, বন্ধু আমার,
হলো পরিচয়; বড়ো অবেলায়।
সোনালী সকাল সময় হারিয়েছ আনমনে
আর অবহেলায়। অথচ তোমার মাঝে
আজো জেগে আছে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি,
এক টুকরো অগ্নিকণা, স্ফুলিঙ্গ;
এখনো তুলতে পারো ফণা ঢেউ সুনামির,
এখনো পোড়াতে পারো যত আগাছা, পৃথিবীর;
এখনো তুলতে পারো ঝড় কাল বৈশাখীর,
পুরাতন জলাঞ্জলী দিয়ে এখনো গাইতে পারো
নতুনের গান।
সব গ্লানি, সব অপমান হোক অবসান।
সব সত্য উচ্চারিত হোক,
সব শোক শক্তিতে পরিণত করো, পিছনে ফিরো
মাথা উঁচু করে শিরস্ত্রাণ পড়ো, বিজয়ের জন্য লড়ো, ইতিহাস গড়ো
সময়ের অপচয় করো না অযথা,
আত্ততা।