পরদিন তিন বন্ধুতে মালপত্র নিয়ে যায় নতুন ঘরে, সাথে কমলাও যায়
নতুন ঘর দেখে কমলার মুখে হাসির রেখা,  দেবী নারায়ণীকে শ্রদ্ধা জানায়
পুকুর ভরা জল দেখে কমলা বলে, আহা কি সুন্দর; কোথায় বাঁধবে ঘাট
দখিনে বাতাসে নতুন স্বপ্ন দ্যাখে মন, সব বাধা কাটিয়ে হাসে জীবনের মাঠ
হরি হাঁক দেয় এদিকি এসো;  জিনিষ পত্তর গুলো কোথায় রাখলি সুবিধে
আমি বাপু বুঝিনে এত, দেখে নাও, ঠিক করে না রাখলি পড়বে বিপদে
গৌর আর নিতাই মিটি মিটি হেসে বলে;  নতুন সংসারে মন দে হরি
তুইও জেনে বুঝে নে, আলগা আলগা থাকলি হবে ! কি করে বাইবি তরী
কমলা এসে বলে, ঠাকুরপো তোমরা ও কেমন কেমন, পুকুরে ঘাট বাঁধুনি  
আর ইনি তো চিনি নুনের ভাগ বোঝেনা, তাতেও লোকে বলে বড় রাঁধুনি  
হরি বলে নাও; এই শুরু হল, বুঝিচি,  এরপর দেকাবে কমলে কামিনী
ওরে দিনু – কি কলে ফেল্লি ভাই ! যত বলি ভেলীগুড়; কমলে বলে চিনি ।  


হাসি মস্করায় কাজে  কখন যে দুপুর গড়িয়েছে, হুঁশ ফেরে কমলার কথায়
ছেলে দুটোরে খাওয়াতে হবে আমি চললুম, তোমরা থাকো হাসি মস্করায়
হরি বলে তাইতো, হ্যাঁরে তোদের খিদে পায়নি ! চল চল আমরাও যাই
নিতাই বলে বেশ তো ছিলি খিদে ভুলে, গিন্নীর কথায় নেচে উঠে খাই খাই
ঘরে, দাওয়ায় আগড়ের দরজার আংটায় তালা মেরে তিন বন্ধু বেরিয়ে পড়ে
তিন জনেই বেশ খুশী, নিতাই বলে হরি; দানা গুলো লাগাবি কবে করে
দুপুরে চান খাওয়া সেরে তিন বন্ধুতে বেরিয়ে পড়ে, মিতের খবর নিতে
সুন্দর দখিনে হাওয়া নদী পাড়ে, বাঁধটাই রাস্তা; পাতলা জঙ্গল চরের দিকে    
মাঝে মাঝে দু-চার খানা ঘর মাথা তুলছে, কারো বা চাল ঢাকা পড়েছে খড়ে
কারো বা আধেক উঠেছে দেওয়াল, সবাই আসছে নতুন আশায় বাদাবন জুড়ে  
গৌর বলে ; হ্যাঁরে হরি লাঙলের জন্যে গরু লাগবে, একেনে কোথায় পাবি
হরি বলে, খোঁজ নিতি হবে গরুহাট কোথায়, না হয় গেরাম থেকে এনে দিবি  
নিতাই বলে হ্যাঁ তাও হয়,  বোশেক মাসে ভালো হালের গরু পাওয়া যাবে  
উদোম খেয়ে গায়-গতরে হলে হাটে আনবে মালিক, ভালো দামও পাবে।
  
কাছারির সদর পাহারায় নতুন লোক, বলে কারে চাই, কি কাজে এদিকি
হরি;  নিধির কথা বলে, পাহারাদার বলে দাঁড়াও একেনে, জানিনে আচে কি
নিধি বেরিয়ে আসে পাহারাদারের পিছে পিছে, বলে আরে মিতে তোমরা !  
বাবুরাম নতুন বহাল; অচেনা, এস দেউড়িতে বসি, তা গোচ-গাছ সব সারা  
ঝোড়োর ছেলে সকালে খবর দিল, তোমাদের  কোন অসুবিধে হয়নি তো
বাবু নেই; নায়েব নেই, কলকাতায় গেচে, একদম বেরতে পারিনি গো।

সোনারপুর
২৮/১০/২০২০