অনেক বছর অপেক্ষার পর
যখন তোমার প্রথম সন্তান হলো,
খুশি হওনি তুমি।
তুমি চেয়েছিলে ছেলে হোক;
বাড়ির সবাই নাকি বলেছিল-
'ছেলেই ভালো'।
ছেলে নাকি বংশের প্রদীপ জ্বেলে রাখে!
তোমাকে তারা আশীর্বাদ-ও করেছিল-
'পুত্রবতী হও'।
তাই আমাকে দেখে সেদিন ঠিক
খুশি হতে পারোনি তুমি;তবু শুধু-
সন্তানের দায় মেনে নিতে হয়েছিল।


মেয়ে হওয়া নাকি বড় জ্বালা;-
তাকে বুকের দুধ দিয়ে বড় করা,
বাইরের কু-দৃষ্টি থেকে আগলে রাখা,
খাইয়ে পরিয়ে মানুষ করা সময়ের সাথে
তাকে অন্যের হাতে সোঁপে দেবার জন্য
শুধু।
তোমাদের রথের দড়ি টেনে নিয়ে যাবার লোক তো আমি হতে পারবো না কোনোদিন।
তাই আমাকে দেখে খুশি হতে পারো নি সেদিন- কন্যাদায় তো বড় দায়।


তুমি চেয়েছিলে আলোর মতো ফুটে উঠবে তোমার সন্তান-
সব বাপ-মা'রাই চায়
তার ছেলে বড় হয়ে কত কি হবে।
তোমার-ও নিশ্চই এমনি আশা ছিল-
তাই তোমার প্রথম সন্তানের মুখ
দেখেও খুশি হও নি সেদিন।
সেই অনাকাংখা বুঝিয়ে দাও তোমার
প্রত্যেক স্পর্শে, প্রত্যেক কথায়।
তোমার ভেতর গুমরে ওঠা যন্ত্রনা ও
বুঝতে পারি আমি;-তোমার রক্তে
বেঁচে থাকা এই হৃদপিন্ডে মোচড়
দিয়ে ওঠে সেই আক্ষেপ।


এক মস্ত ভুলের জন্ম দিয়েছ তুমি-
মৃত্যু জন্ম দিয়েছ।
তারচেয়ে বরং ফিরিয়ে নিলেই পারতে
তখন, তোমার গোপন নির্দেশে তোমার
জরা'র ভেতর থেকে অনাঘ্রাত হাত পা
গুলো কে ছিঁড়ে আনত তারা।
তাহলে হয়তো আমি আসতাম না আর।
আসত তোমার সাধের সন্তান-
তোমার ছেলে।