আমি প্রজা অতি সাধারণ; আমার পরিচয় সবার কাছে আমি একজন প্রজা,
জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত: সহস্র জন্ম-জন্মান্তরে আমি কেবলই একজন প্রজা!


আমি- সহস্র বছর আগে প্রজা ছিলাম গ্রীক সাম্রাজ্রের
যখন আলেক্সজান্ডার দি গ্রেট অধীশ্বর হয়ে উঠেন নি পৃথিবীর,
তখন নিছক বেঁচে ছিলাম বলে শুকরিয়া ছিলো অগ্নি-দেবতার কাছে
শত সহস্র।


অগাস্টাসের দাপিয়ে বেড়ানো রোমান সাম্রাজ্য হতে
সুলেমানের সুবিশাল অটোম্যান সামাজ্রের রম্য মজলিসে-
কিংবা মিশরীয় রহস্যভরা সাম্রাজ্য হতে ধূসর ধূলিময় পারস্যীয় রাজত্ব চষে
অস্ট্রিয়া হয়ে ইংরেজ রাজ্যত্বে এসে
আমাকে কোনখানেই দেয়া হয় নি যোগ্য মর্যাদা;
সবখানেই আমাকে রাখা হয়েছে সাধারণ প্রজার বেশে!


আমার- ভোগের সবগুলো রাজত্বে নানা পেশায় নানা রূপে নানা বয়সে
ঘূরে ফিরে
আমি কেবলই প্রজা ছিলাম, প্রজাই আছি!


ফারাওয়ের কবর খুড়ে- পিরামিড গড়ার আগ পর্যন্ত কিংবা তারও পরে
আমার ভাগ্য বিধাতা তাকান নি একবারও আমার দিকে,


অগ্নি-দেবতা হতে জল-ব্যোম-নক্ষত্র
দেবতাদের আরাধোনা শেষ,
এখন অদেখা ঈশ্বরের স্তুতি জপি আজ:
সহস্র কোটি বছর পর- গণপ্রজাতন্ত্রী এই বিপুল সাম্রাজ্যে
আমি যে স্রেফ এখনও প্রজা, প্রজাই রয়ে গেছি!


রমণীর অকল্প-সোহাগ পাওয়া হলো না তবে আর
কোন রাজ্যে প্রজা ছাড়া কিছুই ছিলাম না বলে।
বিধাতা কী বিমুখ আজও আমার ওপর? কোন কারণে?
আমার জন্মের দায় তবে কে নিবে আজ!


শত সহস্র বছর শেষ হয়,
শেষ হয় কত শত বিধাতার বয়স!
কালের বিবর্তনে বিশ্বের অধিপতি হয় কত মহাজন,
আমার ঘানির দিন শেষ হবে কবে আর?


বুকের সঞ্চিত জ্বালাদহ হারিকেন হয় আজ, ফেনিল হয়ে উঠে তাইফুনসম
হৃদয়ের আকাশ ভেঙে ঝরে উল্কা-তুষার-বৃষ্টির অবিরাম ধারা!


চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়, হে ঈশ্বর!
তুমি কী আজও আমার সহায় হবে না?
জন্ম কী আমার শুধু প্রজার ভূমিকা পালনের জন্য?
তোমার এই অবিচারের বিচার করবে কবে? আমি জানতে চাই, উত্তর দাও।


ইস্কাটন, ঢাকা, রাত, ৬ জানুয়ারি’১৮