মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যায় ।
এক মায়াবী কন্ঠস্বর ভেসে আসে---
অনিরুদ্ধ বেরিয়ে আসে ঘরের বাইরে ;
আলো আঁধারে দেখে দাঁড়িয়ে আছে-
জমিদারী আলখাল্লা গায়ে-
এক বৃদ্ধ সুপুরুষ !
খুব গভীর তার দৃষ্টি;
সারা গায়ে মুখে অপরূপ দীপ্তি !
বলে ওঠে কে আপনি?
ভীষণ চেনা লাগছে !
মনে হচ্ছে কতযুগ চিনি---
কে আপনি ?
ধীর কন্ঠে বলে ওঠেন তিনি---
এত রাতে অশতিপর বৃদ্ধ কে-
ঘরে ডাকবিনা ?
এ তুই কেমন কবি !
কবিরা শুনেছি ভালো মানুষ হয় ;
অন্তত আমাদের সময় তা ছিল ।
সম্বিত ফেরে অনিরুদ্ধের ;
হ্যাঁ হ্যাঁ আসুন আমার গরীব কুঠিরে !
কিন্তু কে আপনি বললেন না যে !
বৃদ্ধ ঘরে ঢোকে ।
বসে লেখার টেবিলের পাশে ।
বিজলী আলোর বাতিতে চমকে ওঠে অনিরুদ্ধ !
টেবিলে রাখা রবি ঠাকুরের সাথে হুবহু মিল !
ভয়ার্ত কন্ঠে বলে ওঠে কে আপনি !
আপনি কে ?
হ্যাঁ; আমি তোর রবি ঠাকুর ।
অনিরুদ্ধ বসে পড়ে ঠাকুরের পদতলে "
চোখ দিয়ে ঝরে পড়ে শ্রাবন ধারা "
কিছু বলতে পারে না ;
শুধু তার পা দুখানি জড়িয়ে ধরে;
বলে আমি কি স্বপ্ন দেখছি!
আমি কি বেঁচে আছি !
নে ছাড় উঠে বস ;
তোর সাথে অনেক কথা আছে---
শুনেছি আমার উপর তোর অনেক অভীমান !
তুই আমার লেখা আর পড়িস না !
এমন কি পাঠকদের পড়তে মানা করিস !
তোর স্পর্ধা তো কম নয় !
সেই জন্যই তো আসতে হলো এমন অসময় !
এবার লজ্জা পায় অনিরুদ্ধ ।
ধীরে ধীরে বলে অনিরুদ্ধ---
ঠাকুর ; এ যে তোমারই কীর্তি ;
তুমি এত সব লিখে গেছ!
তোমাকে পড়ার পর আর-
লিখতে মন চায় না !
মনে হয় সবই তো তোমার লেখা !
সবই তো তোমার ভাষা !
তোমার লেখার পাশে-
আমাদের লেখা খুবই দুর্বল !
তাই আর পড়ি না ;
যবে থেকে আমি , কলম সম্বল !
পাঠকদের ও একই অবস্থা ;
সবাই যে তোমার সাথে তুলনা-
করতে চায় !
আচ্ছা ঠাকুর তুমিই বলো-
আমাদের কি উপায় ?
তাই তো পাঠকদের ও বলি ;
তোমার লেখা না পড়ার কথা !
নইলে যে ওরা বলবে;
অনিরুদ্ধ লেখে সব যা তা !
হো হো করে হেসে ওঠে ঠাকুর ;
অনেক দিন পরে হাসলাম তোকে দেখে!
না , আমি বড়ই বেকায়দায় ফেলেছি তোকে !
তবে কি জানিস ;
আমি লিখেছি আমার মত করে ।
তোরা লিখবি তোদের মত করে ।
এতে অসুবিধা নেই ।
নতুন ভাবে লিখবি ,
নতুন রূপে লিখবি ;
দেখবি তাতে আর আমার গন্ধ নেই ।
ঠাকুর তুমি যে এলে ;
তোমায় কি দিয়ে পূজা করি---
এই বলে অনিরুদ্ধ ঠাকুর ঘরের ভাঁড়ার থেকে-
বাতাসা জল এনে দেয় ।
বড় তৃপ্তি করে ঠাকুর জল বাতাসা খায় ।
কিন্তু আমি যে এসেছিলাম অন্য কারনে ।
তোর লেখা কবিতা শুনবো বলে---
অনিরুদ্ধ আকাশ থেকে পড়ে!
এত দিনের সাজানো স্বপ্ন-
এভাবে কি সত্য হতে পারে !
প্রচন্ড বিষ্ময় নিয়ে বলে---
ঠাকুর শুনবে, শুনবে আমার কবিতা !
এ যে আমার বহু দিনের স্বপ্ন;
শুধু তোমার জন্য;
আমি শোনাব কবিতা ।
আমার আনন্দ , আমার আগুন , আমার ব্যথা ।
এই বলে একের পর এক কবিতা---
পাঠ করে অনিরুদ্ধ ।
কখনো দেখে ঠাকুরের মুখে প্রশান্তি ;
কখনো মিষ্টি হাসি ;
কখনো চোখে জল !
তুই বল আরো বল !
একের পর এক কবিতা পড়ে চলে অনিরুদ্ধ ।
আজ তার কবিতারাও বড় সুখি ;
নিজেকে ভীষণ হাল্কা মনে হয় !
এত সুখ কখনো পায় নি হৃদয় !
আস্তে আস্তে ভোরের আলো-
উঁকি দেয় জানলায় ।
ঠাকুর বলে আজ চলি ;
অনেক টা দূর যেতে হবে ; বিদায় ।
তবে আমি আসবো আবার-
শুনতে তোর কবিতা ।
দিয়ে গেলেম মোর সে বারতা ।
ঠিক আসবে তো ঠাকুর ?
ঠিক আসবে তো ঠাকুর ?
আবার আমার ঘরে।
তোমার জন্য আসন পাতা -
আমার অন্তরে ।
আর একবার পা ছোঁয় অনিরুদ্ধ ;
বড় ভক্তি ভোরে ।
বড় আনন্দ , প্রশান্তি আজ তার অন্তরে ।
বড় রাস্তায় এগিয়ে দিয়ে আসে-
বড় আদরের ঠাকুর কে ।
ঠাকুর মিলিয়ে যায় ভোরের আঁধারি আলোকে ।
অনিরুদ্ধ বলে ওঠে---
ঠাকুর এসো কিন্তু আবার ।
ঠাকুর এসো কিন্তু আবার ।
হঠাৎ এক ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে যায় !
মা বলে; কিরে, কি বলছিলি ঘুমের ঘোরে হায় !
ঠাকুর ঠাকুর বলে কি বলছিলি ?
তুই কি স্বপ্ন দেখছিলি ?
তাকিয়ে থাকে অনিরুদ্ধ!
আমি কোথায় ?
কেন তোর বিছনায় !
সকাল হয়েছে মাঠে যাবি না ?
ফিরে বাজার করে পড়াতে যেতে হবে তো !
চল উঠে পড়---
অনিরুদ্ধ উঠে পড়ে---
সব বুঝতে পারে !
ঠাকুর রাতে স্বপ্নে এসেছিল !
স্বপ্নে হোক তবু তো এসে ছিল !
আর একবার প্রণাম করে ঠাকুরের ছবিতে ।
বলে ; ঠাকুর তুমি এসো কিন্তু আবার ।
আমার স্বপ্নে তুমি এসো বার বার ।।