মহান করুণাময় আল্লাহর নামে আরম্ভ করলামঃ


কবিতার পিছনের কথা যদি কবি বলার সুযোগ না পান
প্রায় কবিরই কিছু সংখ্যক কবিতা নিয়ে এক সময় সমালোচনার ঝড় উঠবে
কারণ- ’কবিতা হলো চার আনা বুঝার আর বারো আনাই উপলব্ধির বিষয়’ বলে আমার বিশ্বাস
যা থাকার কথা নয় সব পাঠকের মাঝে।


সেদিনের কথা -
পড়ন্ত বিকেলে বসে ছিলাম আম গাছের ছায় বাঁশের মাচার উপর।
আমাদের পাড়ারই ছোট্ট এক মেয়ে এসে ঘুর ঘুর করতে লাগলো পাশে
বুঝতে পারছিলাম ও’ কিছু একটা বলতে চায় কিন্তু পারছে না।
বাধ্য হয়ে আমিই জিজ্ঞেস করলাম ‘কিছু বলতে চাও তুমি?’
সাহস সঞ্চার হলো যেন নিঃস্পাপ বাচ্চার মনে
তবুও অনুনয়ে বললো- আপনাদের বেড়ার গেটটা একটু খুলে দিবেন, ভিতরে পাকা জাম পড়েছে, কুড়াতাম!
ইচ্ছে করলে ও’ অনায়াসে ঠেলে ঢুকতে পারতো, তা করেনি।
বললাম - যাও চাটাই খোলা আছে!
যাবার জন্য উদ্যত হতেই ফের ডাকলাম - শোন, জামগুলো অবশ্যই কিন্তু না ধুয়ে খাবে না!
ও’ চলে গেলো।


অনেকক্ষণ পর
আমি চিন্তা করছিলাম তখন আনমনে
হঠাৎ তাকিয়ে দেখি সামনে সেই মেয়েটি দণ্ডায়মান
হাত ভর্তি পাকা জাম তখনও পানি ঝরছে টপটপ করে
আমার একটুও বুঝতে অসুবিধে হলো না  যে ‘ভাগ দিতে এসেছে’!
চোখ দু’টি ছলছল করে উঠলো
শুধু বললাম ‘আমি খাবো খুকি না তুমিই খাও’!
আর কথা বলতে পারলাম না।


ভাবতে লাগলাম
বিধাতার কথা দূরেই থাক
পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত-অপরিচিত
এমন কি প্রকৃতির কাছ থেকে রোজ কতো কিছুই না হস্ত প্রসারিত করে গ্রহণ করি
নিজেকে জ্ঞানী ভেবে কৃতজ্ঞতা পর্যন্ত স্বীকার করতে চাই না সব সময়
অথচ অবুঝ এক মেয়ে আজ ঠিকই বুঝিয়ে দিলো কিভাবে রাখতে হয় মনুষ্যত্বের মান। আর বসে থাকতে পারিনি, অশ্রু ভরা দু’টি চোখ নিয়েই কবিতায় লিখলামঃ


এক খুকির কথা
============@@@


বসে আছি একা টঙের কিনারে
এক খুকি এসে কয়,
দাও না বেড়ার বন্ধন খুলে
আমি কি আপন নয়!


ওপাড়ে দেখেছি পড়ে আছে কতো
টসটসে পাকা জাম,
কুড়িয়েও খেলে করবো না বলো
হরষে তোমারি নাম!


বললুম তারে বাঁধা নেই খুকি
আরও খুশি হবো জেনে,
স্বচ্ছ পানিতে ডুবিয়ে তা খাবে
এ কথা নিলে কি মেনে?


মায়া ভরা চোখে চেয়ে সে বললো
লুকালেই অনুরাগ,
ধুয়ে এনে বুঝি তোমারে দিবো না
সমাদরে ক’টা ভাগ!


জানি না যে কেন সহসা জমলো
অক্ষি কোটরে পানি,
মনে হলো শুধু নিশ্চয় আমি
নই ওর মতো জ্ঞানী!