এই বিশ্ব মঞ্চে বাসর খুজিবার অভিলাষ লইয়া আসি নাই, আসিয়াছি স্নেহের আসর মাতাইতে। তা বালা, তাঁরার ফুল হইয়া আকাশে কত সময় জাগিতে পারিবে? বড়জোর এক নিশি কিন্তু এই হৃদয় আকাশে তোমার অহরহ অস্ত উদয় হয়, তাহা কখনো ভাবিবার বোধ কর নাই। মাঝে মাঝে কত তাঁরা ওই আকাশ হইতে ছিটকাইয়া পড়ে আর জায়গা হয়না, অথচ আমার ক্ষুদ্র হৃদয়ে তোমার আসন পাকা পোক্ত রহিয়াছে তবু ভরসা করিয়া দাঁড়াইতে পারিলে না আমাবরশার রাতেও তুমি উদয় হও, কেউ ঢাকিতে পারিবে না।


চাঁদের আলোতে ভাসিলে তোমার হিংসা হয় কবি? বর্ষার লগ্নে যে আমি জ্বলে মরি সে খবর আছে? শত বছর পরে মনে পড়ল? কেমন আছ কবি?


তা সোনার বদন চাঁদের মতন মুখখানি ঢাকিয়া রাখিলে, কি চেনার কোন উপায় থাকিবে?  উড়ন্ত বেলার পড়ন্ত বিকেলে জানিতে চাহিলে কেমন আছি? আমি ভাল আছি।
শরতের নীল প্রহরে কাশফুলের মাথায় বসিয়া যখনি উড়িয়া বেড়াও, মনে অপবাদে বলিয়া বেড়ায় তুমি আমার সহিত গোপনে গোপনে লুকোচুরি খেলা খেলিতেছ। মেঘবালা হইয়াছ, তাই বলিয়া কি জানিতে পারিনা তুমি কেমন রহিয়াছ?


সাধখানা বাঁধে আটকায়ে বলি হে কবি, আমি মিলিয়ে যাওয়া  শিশিরের মত আছি। সারারাত তোমার ছোঁয়ায় জাগতে চাই কিন্তু ভোর হলেই সেই আশা মাটি হয়ে যায়। নীরবে পদার্পণ করি অন্তহীনে। আমি আবার মুখখানা ঢাকিলাম কবে? স্বপ্ন ভাসার প্রথম রজনীতে কত করে দেখলে খেয়াল নাই?  


উড়ন্ত পাখির ডানার পর্দা টানাইয়া, দিগন্তের মাঝে লুকাইয়া রাখার বাসনা লইয়া, কেন তবে হৃদয়ে পদার্পণ করিলে তাহা আমার বোধগম্য হইল না। সাধের কি কোন অন্ত আছে? সব ভুলিয়া নতুন খেয়ালে জড়াইলে মন্দ হয় না বালা? ঝরা পাতায় কি লিখিয়াছ সকলে মর্মরে উড়িয়া কবিতার খাতায় বসিয়া আমারে বেখেয়ালি করিতেছে?


অতিথি হয়ে এলাম তোমার মন আকাশে, উঁকি দিয়ে দেখেছ? আর কিছু বলার কি বাকি রইল?  


আজ তবে আকাশ ছাপিয়া বর্ষণ হইল, তবে তাহা হৃদয় আকাশে ছবির বর্ষণ অন্তর জ্বালা মিটিল বটে, তবে তাহা অনেক প্রতিক্ষার পর যাহাকে সম্মুখে দেখিবার অভিলাষ থাকা সত্ত্বেও, সম্মুখে আসিবার সাহস করে নাই তাহাকে আর কি বলিবার বাকি থাকে? যাহা অপূর্ণ তাহা আর পূর্ণ করিবার সাহস করিনা, যদি সমস্ত কথা শেষ হইয়া যায় আর নতুন খেয়াল না জাগে এই শংকায় মরি।


সমুদ্রের গভীরতা দেখায়ে নদীর তলে ডুবালে আমায় কবি? অভিমানে এত কথা শুনাও হে কবি এই ভরা পূর্ণিমার রাতেও?

মণি নির্জন তল রাখিয়া, তীরে ভিড়াইলেই হৃদয়ে কোলাহল বাড়িবে, দামি হইবে, ধন্য হইবে। হাতের ফাঁক গলিয়া জল চুয়ায় বটে কিন্তু যাহার হৃদয় উছলিয়া একটু মধুর ডাক আসিল না, সেই রমণীর হাতের অমন রসের মিষ্টি, কি করিয়া খাইব, তাহা ভাবিয়া দিশা নাহি পাই । বন্ধুত্বের মরণ নাই দরকারে ডাক না পাইলে সুখের সময় পাশে থাকিয়া কি লাভ হইবে?


তা বিদ্রূপের খেলা এখনো কি চলে? বাউন্দুলে জীবন নাওয়া খাওয়া? তোমায় চিনতে কতকাল ক্ষয়ে গেল হিসাব রেখেছ কবি? বিধুর চোখে তোমার আগমনের অপেক্ষায়?


খেলার ঠেলায় মেলার হাটে সদায় করিতে পারিলাম কই? হাওয়া খাই, কবিরাজের দাওয়া খাই, তবু পেট চাই চাই। পরিচয়হীন মানবের কি প্রকারে পরিচয় থাকিতে পারে, তাহা আমার জানা নাই? হিসাব রাখিয়াছি আকাশের সমস্ত তাঁরা গুনিয়া।  ছিলাম বটে তবে তাহা মুখের রসে? অন্তরের রসে ভিজিলে তাহার সুবাস ছড়াইত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। বাড়ির আঙ্গিনায় আসর বসাইয়া সে আড্ডাও জমিত।


কিন্তু জোনাকির সাথে রোজ রাতে চোখে চোখে মেলে কথা হয়। শুধু ফুলের নেশায় বিভোর হলে দেখবে কেমন করে? এত অচেনার ভান ধরলে চিনবে কেমন করে?  


জগত সামলাইবার দায়িত্ব যেহেতু রমণীদের উপরেই অর্পণ করা হইয়াছে তাই অচেনা মানুষকে চিনিয়া লইবার সেই গুরু অর্পণ তোমার হাতেই থাক বালা। রংধনুর সাত রং দলিয়া আমার পথ চলা। খুজিয়াছ?


কবি তুমি বর্ণহীন বর্ণ। আমি তোমার জাত চিনতে পেরেছি অনেক আগে, কিন্তু ডাকার সাহস পাই নাই। যদি কবি মনে উদাস হয়ে আমার মত অসুন্দর আঁধারে ঢেকে মিলে যাও!!!


মনের ঘরে খিল লাগাইয়া পথ খুজিয়া বেড়াইলে তো আর পথের সন্ধান পাওয়া যাইবে না, আলোতে আসিয়া সরল চোখের চাহনি দিয়া আলো ঝলমলে ভুবন মাঝে তাহার সন্ধান করিতে হইবে


নির্বাক হৃদয়ের শীতল শিহরণে অনুভব কর আমি কত অসুন্দর?


যে নিজেকে অসুন্দর বলিয়া বেড়াই তাহাকে সুন্দর বলিবার সাধ্য আমার নাই। আপন মনকে যে মিথ্যে প্রবঞ্চনা দেয় তাহার মত অমন অসুন্দর পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নাই। হৃদয়ে কালো ছাপিয়া গিয়াছে কিন্তু তাহারে মনের আলোয় ভাসাইতে ভাসাইতে সুখের সাগরে ডুব না দিলে মণি মুক্তার আলো এই ভুবন মাঝে কি রুপে ছড়াইবে?


ভুল হয়েছে কবি। রোজ ডাকব মাঘী শীতের রাতেও, আসবে কি দেখতে?


স্বপ্নের বালুচরে নিজকে দাবাইয়া, তাহার ভুল তোমার উপর বর্তায়ব কোন প্রকারে? ভুল দিয়ে কি যাইবে গো আজন্ম ফোটা, আসল ফুল চেনা? তুমি মুক্ত কেশরীর দোলা, তুমি ক্ষণে ক্ষণে আমাকে দোলাইয়া যাইবে ইহাতেই পরম সুখ।  


সন্ধ্যার সোনালী লগ্নের পালকিতে চড়ে আসবো, কোন এক তিথির আয়োজনে। অমন নিরালেও মনের অব্যাক্ত হাজার, গুপ্ত কথা সুন্দর করে প্রকাশ করতে পারলাম না শুধু শুধু হৃদয়ের হাহাকার বাড়িয়ে নিলাম।


নিয়তি বিদায় বলিলেই কি হৃদয়ের চাওয়া হারানো হয়? সেই পথের সূচনা হইবে আশা রাখি, যেমনটি দিগন্তের ওপাড়ে আকাশ আসিয়া মাটিতে মেশে। যাহা সুন্দর তাহা চাঁদের চেয়েও সুন্দর, তাহা যে ভাবেই ভাব প্রকাশ করিয়া, হৃদয়কে শীতল করিতে পারিবে। আমি না হয় একটু, অপটু বাঁশিওয়ালার মত বাঁশি বাজাইলাম। যাহার কোন ধরাবাধা সুর নাই বটে, তবে হৃদয় মনকে ক্ষণিকের জন্য উদাস করিবে।


কবি আলো নিভে যায়!!! হৃদয়ের প্রদীপ নিভিও না। না হয় চিরতরে হারিয়ে যাব। তুমি রয়ে যাবে গানের পাখি হয়ে। ডাকলেও হয়ত আর আসা হবে না। হৃদয়ের প্রদীপ নিভিও না কবি। মন বেধে রাখার মত, কোন ঘর পেয়েছ কবি?


বালা, তোমার আলোতেই চলিতেছি মরু গিরির আঁধার পথে। চোরাবালিতে ঘর খুজিতেছি, যাহা শীতল হাওয়ার ঘূর্ণিপাকে ভাবনাকে উড়াইয়া লইয়া যাইবে শিমুল বনে, যেথায় পায়ে আলতা মাখিয়া কোমল সবুজ ঘাসে, তুমি রোজ আসন পাতিয়া বস। তেমন ঘর এখনও পাই নাই, বাধ্য হইয়া ইট পাথরের শহর ঢাকাতেই পড়িয়া রহিয়াছি।


আজ না হয় হারিয়ে যাই অন্ত নিশির ডুবন্ত বেলায়। বিদায়!!! চোখে আর বাঁধ দিতে পারছি না। জলের লহরে লহরে আজ প্রলয় নেশা। মেঘের ছায়াকে আঁচল বানিয়ে, তোমার জ্বলা বুক মুছে নিও, হয়ত ক্ষণিকের জন্য একটু শীতল হবে। বিদায় হে কবি।


বলিও না মেঘবালা বিদায়, বলিয়া যাও আসি। আমার ও কি ঝর্ণা কম বহিয়া যায়! শুকাইয়া গিয়াছে স্রোত ধারা, তাহা দেখাইতে পারিলাম না, তোমার বিদায় বেলায়। বিরহের সাগরে পড়িয়া আজ কূলে পিছুটান খুজিয়া ফিরি, সেই কূল হইতে একদিন কি আশা করিয়া সাগরে ঝাঁপ দিয়াছিলাম। নিজেকে অন্তরালে লইয়া বিধুর ঠোঁটে হাসিয়া, নিজেকে উপহাস করিলেই সেই দুঃখের সাঙ্গ হইবে। আমার সমস্ত দুঃখ দিয়া, কাহারো ঠোঁটে হাসি ফোটাইতে পারিলে তাহাই আমার জন্য শ্রেয় হইবে। কণ্ঠ বসিয়া যায় ডানা ঝাপ্টাইয়া, আমিও লুকাইয়া যাইব রাতের আঁধারে, দুখের সাগরে একাকার হইয়া মিশিয়া অস্তিত্বহীন হইয়া যাইব, ডুবিয়া যাওয়ার সাহস লইয়া।