একদিন এই পৃথিবীর আলো আমার চোখে পরবে না,
ভোরবেলা মুয়াজ্জিনের কন্ঠটাও হয়তো কানে যাবে না,
পাখির কিচিরমিচির ধ্বনিও হয়তো শুনতে পাবো না,
কুয়াশা ঘেরা ভোরে;
শহুরে মানুষের জেগে ওঠার দৃশ্যটাও হয়তো আর দেখবো না।
কিংবা,কোমরে দড়ি বেধে খেজুরের রস নামাতেও
হয়তো যাবো না,
মাথায় গামছা বেধে গরু নিয়ে মাঠে যাওয়াও হয়ত
আর হবে না!
চটের ব্যাগ নিয়ে গ্রামের বাজারে যাওয়া আর
কড়া লিকার দেয়া চায়ের কাপে চুমুক দেওয়াটাও
হয়তো আর হবে না!
ভরদুপুরে কোলাহলপূর্ণ ঘাটে মাথাডুবিয়ে স্নান করা
অথবা পাড়ার ছেলেদের সাথে দলবেঁধে
নারকেল গাছের ডগায় উঠে ঝাঁপ দেওয়া
এসবও হয়তো আর হবে না!
একটুকরো ভাজা ইলিশ নিয়ে ধোয়া ওঠা
ভাতের প্লেট নিয়েও হয়তো আর বসবো না!
প্রেয়সীর বাড়ির সামনের রাস্তায় গিয়ে লুকিয়ে শীষ দেয়া
বা তার বাড়ির টিনের চালে ঢিল ছোড়াটাও হয়তো আর হবে না!
পড়ন্ত বিকেলে কারো হাত ধরে বসে থাকার জন্য
অপেক্ষাও করবো না!
গোধূলী লগ্নে বিমুগ্ধ নয়নে আকাশের পানে তাকিয়ে থেকে
দূরের সন্ধ্যাতারা হওয়ার স্বপ্নটাও হয়তো দেখবো না!
কোন পূর্ণিমা রাতে বাড়ির উঠোনে বসে
গলা ছেড়ে গানও হয়তো গাবো না !
কোন আসরের মধ্যমনি হয়ে চুটিয়ে গল্প করা,
তারপর তর্ক,শেষমেষ হাতাহাতি করাটাও
হয়তো আর হবে না!
-------------
কিন্তু,শুধু চোখের পলকদেয়া বন্ধ হয়ে গেলেই
কী আমার অনুভূতিগুলো নষ্ট হয়ে যাবে?
মুছে যাবে জীবনের সাথে মিশে থাকা
প্রতিটা মুহূর্ত?
আশেপাশের মানুষগুলোর কাছে কী আমার
কোন অস্তিত্ব থাকবে না?
তাদের সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তই কি
শেষ হয়ে যাবে আমার নিঃশ্বাসের সাথে?
জানিনা!হয়তো জানতেও চাই না!
স্বার্থপর এ পৃথিবীতে একটা মানুষের কথা
কেইবা মনে রাখে!
তবুও প্রতিটা মানুষ একটা গল্প লিখতে চায়
একটি সাধারণ মানুষের অসাধারণ গল্প!
এ গল্প ঠাই পায় না কোন বইয়ের পাতায় বা
কারো কবিতার খাতায়।
স্বর্ণদ্বারে রুদ্ধ মানব মনের মনিকোঠায় লেখা
এ গল্পগুলো নিঃশ্বাসের পরোয়া করে না!
নিঃশ্বাসটা হয়তো বন্ধ হতে পারে,কিন্তু
অনুভূতিগুলোর কখনো মৃত্যু হয় না।
একটি অলিখিত গল্পও তেমনি কখনো শেষ হয় না!
অসমাপ্ত গল্পগুলোর উপসংহার লেখা হয় না কখনোই!
সময়ের গন্ডি পেরিয়ে এরা বেচে থাকে অনন্তকাল।
আর একটি কবিতা!তুচ্ছ এ কবিতার শক্তি নেই
সে গল্পকে তুলে ধরার!