অজন্তা ইলোরার ভাঁজে ভাঁজে যে 'সত্যি'- 
একদিন লুকিয়ে রেখে এসেছিলাম যত্নে, 
মনে পড়ে? মনে পড়ে তোমার? 
লুভরের দিনগুলি, তোমার কি আর ফিরে পেতে ইচ্ছা করেনা? 
ইচ্ছা করেনা, হাতে হাত রেখে তন্ময় হয়ে- 
মোনালিসার বাঁকা হাসির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে? 
কি জানি? কঠিন সময়ের আবর্তনে,
প্রাত্যহিক বাঁধা ধরা নিয়মের বেড়াজালে- 
হয়তো কোথা়য় হারিয়ে গেছে রোমিও-জুলিয়েটের দুরন্তপনা! 
তুষারাবৃত পাহাড়ি পথের বাঁকে, 
গভীর খাদের দিকে মুখ করে চিৎকার করে বলা- 
"অদিতি… তোমাকে আমি প্রাণের চেয়েও বেশী ভালোবাসি…"
হ্যাঁ, আজও একই রকম ভালোবাসি তোমাকে।
অথবা মধ্যরাতে নাইটিংগেল এর অলিতে গলিতে,
লোকের বাড়ির দেয়ালে আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে আসা!
ঝাপসা কাঁচের জানালার ফাঁক গলে বয়ে আসা হিম বাতাস-
পুরনো দিনের গন্ধমাখা, স্মৃতিকাতর হই!


একবার সেন্ট্রাল এভেন্যু হয়ে বাড়ি ফেরার পথে- 
তোমার সে-কি বায়না। সারাদিন-
হাড় কাঁপানো শীত শহর জুড়ে। 
সেই সঙ্গে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। পথচারী সকলের সঙ্গে একটি করে বর্ষাতি।
এটাই লন্ডন শহরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, 
বলা নেই, কওয়া নেই হটাৎ বৃষ্টি। 
সেই ভয়ানক শীত, ঠান্ডা উপেক্ষা করে,
আমাকে বাধ্য করেছিলে তোমার সঙ্গে আইসক্রীম খেতে। 
যদিও আইসক্রীম পার্লারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছিলো।
তোমার আমার দুরন্তপনা আর হুটোপুটির দিন গুলি খুব মিস করি অদিতি। 
আজো ফ্রাঙ্কফুর্ট এর বই মেলা-
আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। 
"ওয়েস্ট মিনিস্টার এভেন্যু" এর দুই পাশের ফুটপাথ আমাকে ডাকে। 


ফেলে আসা অতীত, স্মৃতির মানসপটে-
ধুলো আর বালিতে ঢেকে গেছে অনেকখানি!
ঘোলাটে চশমার কাঁচ, শার্টের কোনায় মুছতে মুছতে-
পড়ার ঘরের দিকে এগোলাম। 
দেখলাম হুইল চেয়ারে শরৎ বাবুর 'শ্রীকান্ত'কে চোখের সামনে ধরে বসে আছো। 
জানিনা কেন হটাৎ করে মনটা চাঙ্গা হয়ে গেলো। 
ব্যালকনীতে এসে দাঁড়ালাম, বিকেলের বৃষ্টিতে রেলিংটা ভিজে আছে। 
আকাশটা অনেক নীল, সোনালী রোদে ঝকঝক করছে চারপাশ। 
আজ আমি তোমার কোন নিষেধ শুনবোনা।
তোমার কোন যুক্তি অথবা  বাধার ধার ধারবোনা। 
গ্যারাজে থাকা ধুলো জমা বুড়ো 'এস্টন মার্টিন'টাকে ঝেড়ে মুছে,
আবারো বেড়িয়ে পড়বো অদিতিকে নিয়ে। 
ওকে দেখিয়ে দিতে চাই আমার বুড়ো হাড় এখনো ক্ষয়ে যায়নি। 
আমি আজো ওকে পাঁজা কোলে করে,
কুড়িটা চক্কর মারবোই মারবো। 


©সুব্রত ব্রহ্ম
নভেম্বর ২৩, ২০১৪ইং:
ধানমন্ডি, ঢাকা।
(১৬/১১/২০১৭ এ পুনঃ সম্পাদিত)