শেষ খেয়ার যাত্রী হয়ে
নীরবতার অন্তিম অরণ্যে,
কোন একদিন আমিও হারিয়ে যাবো।
চিরকালের পথ ধরে
সব প্রহর অতীতে ফেলে,
কোন একদিন আমিও শীতল হবো।


পুরনো বসতির রুগ্ন দেয়ালে,
জায়গা করে নেবো,
ধাতব ফ্রেমে বাঁধা এক টুকরো ছবি হয়ে।
বহমান কালের রঙিন পাতা থেকে,
কোন একদিন আমিও মুছে যাবো।
উড়তে থাকা ধুলোর মলাটে, ধূলির আধার হয়ে।


অভিমানে ডানা ছড়াবে,
আঙিনার থাকা বটের নিষ্প্রাণ শাখাগুলি।
চেনা পথের বুক থেকে
একে একে বিলীন হবে,
মিশে থাকা আমার সকল ধূসর পদধূলি।


গ্রীষ্মের দুপুর নিজেই ক্লান্ত হবে।
নদীর ঘাটে আনমনে বসে,
কল্পনার তুলিতে রাঙাবোনা আর,
গহীন দেয়ালে থাকা আমার অবুঝ চিত্রপট।
বরষার শীতল রাতে,
জানালা খুলে দুহাত বাড়াবোনা আর।
কেঁদে কেঁদে সে ঝরে যাবে অঝরে,
ভিজিয়ে যাবে চিরচেনা আমার সকল পথঘাট।


আমায় সাথে নিয়ে যে শরতের বিকেল,
ছবি আঁকে সীমানা-হীন আকাশ জুড়ে,
সেই শরতই একদিন সুনীল হবে,
মেঘের ভেলাগুলিও ব্যাকুল হবে,
খুঁজে যাবে আমায়, বিরহী বীণার সুরে।


হেমন্তের গোধূলি শীতল হবে আমায় ছাড়া।
খেজুরে রসের হাড়িতে বসে
শিস দিয়ে আর আমায় ডেকে যাবেনা
রাতপ্রহরী সাদাকালো ভোরের দোয়েল।
শীতের ঘন কুয়াশা আমায় লুকাবেনা।
পরশ বুলাবেনা আর আমার গায়ে,
শিশিরে ভেজা সেই সোনালী উষ্ণ সকাল।


বসন্তের পাতা বৃদ্ধ হবে।
ঝরে যাবে জমা স্মৃতি আপন গহীনে রেখে।
সেই নিদারুণ কালবেলায়।
প্রাণহীন হবে বসন্ত বিকেল,
গাঁয়ের মাঠে সাতরঙা ঘুড়ি উড়াবেনা,
ডানপিটে সেই অবাধ্য ছেলেটি
একাকী অবুঝ অবেলায়।


বয়সী বটের শাখাগুলি আর
সাক্ষী হবেনা কখনো কোনকালে।
বোনের সাথে খুনসুটিগুলি চাপা পড়ে রবে,
আলমারির এক কোণে ছবির এ্যালবাম হয়ে।
কাগুজে তরী ভাসবোনা একসাথে,
চাঁদের আলোয়, সন্ধ্যার বর্ষাজলে।


প্রিয়ার অপেক্ষার চাহনি
ধীরে ধীরে ঝাপসা হবে।
চোখের কালো-জলে গড়িয়ে যাবে।
সুরমা মাখা পুরনো সকল স্মৃতির আলাপন।
বাঁশের বাঁশিতে সংসার বেঁধে নেবে,
লুকিয়ে থাকা চতুর ঘুণপোকা।
সকলের অগোচরে থেকে যাবে ওরা।
সুখের নীড়খানি ভাঙার আর কেউ রবেনা তখন।


জানিনা আবারো ফিরবো কি কখনো,
সোনালী হরফে লেখা আরেকটি পুনঃজনমে।
সে-বেলার প্রতীক্ষা নিয়ে,
একালের সব প্রহর অতীতে ফেলে,
কোন একদিন আমিও শীতল হবো কালের চির-নিয়মে।