(কোলকাতার নোনাডাঙ্গা থেকে গরিব বস্তিবাসীদের মারধর করে গায়ের জোড়ে উচ্ছেদের চেষ্টা করেছিল রাজ্য সরকার। তার প্রতিবাদে এই কবিতাটি লেখা। ঝাড়খণ্ড থেকে প্রকাশিত 'দূর্বাসা' পত্রিকায় প্রকাশিত। আপনাদের মন্তব্য পেলে খুশী হব।)


“বুড়ো ভগবান নুয়ে নুয়ে চলে
পিঠে উইলের বস্তা
গোলমেলে এই দুনিয়ার সম্পত্তি
কাকে দিয়ে যাবে,
ভাবনায় সারা মাথাটায় টাক ভর্তি।“
                             (শেষ উইল/কবি বিমল চন্দ্র ঘোষ)


বুড়ো ভগবান ঝুঁকে ঝুঁকে চলে
লবনডাঙ্গার মাঠে
‘কচি ছেলেগুলো কোথা চলে গেল’,
বুড়ো ভাবে, চিন্তায় মাথা নাড়ে
উৎকণ্ঠায় ঘোলা চোখে চায় দূরে

‘ছেলেগুলো ছিল বড় ডানপিটে!
ধুতি টানে, দুয়ো দিয়ে ছোটে।
ধুলোমাখা যত ন্যাংটা ছেলেরা!
ওদের ঝুপড়িগুলো…’, বুড়ো ভাবে…
‘কারা এসে ভেঙে দিল?’

যোসেফ কামার, করিম চামার
চা-দোকানী রাম নেই
তুলসীমঞ্চ, তসবীর মালা,
ক্রিস-মাস ট্রি ধুলোয় লুটায়
চোখ মুছে বুড়ো ঘোলাচোখে চায়।

হাজার বছরী কলজে হাঁফায়
পোকা-কাটা শাল ধুলোয় লুটায়
বুড়ো নির্বাক
ভাঙা খাটিয়ার পাশে
রোদ এসে পড়ে টাকে।

মাথা ঘোরে, পা টলে যায়
শূন্য দৃষ্টি, দু-পাশে তাকায়
ধুলোমাখা এই শিশুদের নামে লেখা
গোলমেলে এই দুনিয়ার সম্পত্তি
কাকে দেবে তবে? বুড়ো পা বাড়ায়…

কোটাল আসছে লাঠি হাতে তেড়ে
ভগবান দেখে… বস্তা নামায়,
তামাক ধরায়… গালাগালি দেয়।
দূর থেকে দেখে আমিনা, প্রতিমা—
বস্তা পিঠে বুড়ো ফিরে যায়…

পায়ে পায়ে হাঁটে, ঝুঁকে ঝুঁকে চলে
পিঠে উইলের বস্তা
অশ্রু-ঘামের নোনাডাঙা ছেড়ে
নিরুদ্দেশের দিগন্তরেখায়
বস্তির যত ন্যাংটা ছেলের খোঁজে

বুড়ো ভগবান ফিরে চলে যায়…
বুড়ো ভগবান ফিরে চলে যায়…