ছোটোবেলায় বসন্তে ভোগার পর থেকে
গোয়ালার থেকে গরুর দুধ রাখতেন মা।
মোটা সর পড়া সে-দুধ এক চুমুকে শেষ করা কাজ।
ভাতের সঙ্গে নিম-বেগুন, হলুদবাটা-ভাত দিতেন  
বিছানায় শোয়া বসন্তের গুটিভরা শরীরকে
সারা দিন খুশি রাখত রবিন ব্লু-রাঙানো আকাশ
আর মাথা তোলা সুপুরি-নারকেল গাছেদের স্পর্ধা
হেসে হেসে দুলে যায় সারা দিন খেলা করত,  
লম্বা হাত বাড়িয়ে ঘুড়ি লটকাতো বাচ্চাদের জন্যে…


এবছর পক্সে নাতি ভোগার পর বাড়িতে
ফ্রিজের পেট ভরে উঠেছিল প্যাকেট-ভরা ঠাণ্ডা দুধে
মুখের রুচি নেই, তাই তৈরি হত চিকেনস্যুপ, পাস্তা,
শোবার ঘরের খাটের ধারে আনা ছিল কম্পিউটার
যার মনিটর-জুড়ে গাড়ির রেস বা বন্দুকবাজদের
দাপাদাপি। ছেলেটির মা তখন অন্য ঘরে
নিয়ম করে সিরিয়াল আর নাচ-গানের আসরে মজে।


ঠাকুমা বলতেন, নিম-কালমেঘের বড়ি খাবি রোজ।
বলতেন, বাড়িতে ছিল গোটা চল্লিশেক সুপুরি গাছ,
নারকেলের বাগান আর পুকুরে রুই-কাৎলার সংসার।
নতুন ধানের নবান্নে জিরেন কাটের জালে তৈরি
নলেন গুড় আর পায়েসের। ঠাকুমার চোখ দুটো তখন
অনেক দূরের আকাশের সীমায় মাঠের দিকে স্থির।


আমি আজও সেই দিগন্তের দিকে তাকিয়ে
দেখতে চাই ঠাকুমার নিম-কালমেঘ-নবান্ন…
তাল-নারকেলের স্পর্ধিত নাচ, গরুর বাট থেকে দুধ চোষা…
আমাকে জিভ ভ্যাঙ্গায় ফ্রিজের বাসি পাস্তা, মনিটর-ক্রীড়াঙ্গন…
জবুথবু হাত-পা নিয়ে রুগ্ন নাতি কখন যেন
সময় পরিবর্তনের ধ্যাষ্টামোকে জিভ ভ্যাঙ্গায়


অথচ, আর একটু হেঁটে গেলেই হিজলের বনে
সব আছে… সবাই ফিসফিসিয়ে হাত বাড়িয়ে ডাকছে
অভিসারিকার মত, হৃদয়ছোঁয়া বাঁশির টানে…