(মুক্তগদ্য কবিতা)
...........................


এভাবে কেন চুপি চুপি আসিস আর ফিরে যাস? কৃষ্ণচূড়া পাঁজর-ফাটানো রক্ত এনেছে পাপড়ি-মুখে। ভয়ে বিবর্ণ বোগনভিলিয়া। ওরা তো তোকে দেখেই ত্রস্ত। আর, তোর চোখে ভেসে বেড়াচ্ছে শ্রাবণের মেঘ। একটু নিংড়োলেই বুঝি বান ডাকবে। অগ্নিগিরির থেকে হঠাৎ যদি সজলধারা গড়িয়ে আসে, কেঁপে উঠবে না হাসনাহানা!
          অথচ, বুকের তুলসীতলায় কথা ছিল প্রদীপ জ্বালার। কথা ছিল, মাটির দাওয়ায় ভোরে দেব গোবরছড়া। ডেকে উঠবে কাজলা গাই। কথা ছিল, চষা মাঠের নকশী কাঁথায় মুড়ে ফেলবি শীতের বিকেল। সাঁঝবাতিরা হিংসে করবে। কথা ছিল, কমণ্ডলুর শান্তি জলে স্নান করাবি জৈষ্ঠ্য দুপুর, উদোম মাঠে। তুই তো তখন কোন সে দূরে, উদাসপুরে, জলের ঝাঁজি উপুড় করে অন্য কাউকে ভিজিয়ে চলিস।
            এলি তবে। আয় তাহলে। উঠোন বেয়ে আয় তো এখানে। বোস তো মাটির দাওয়ার ’পরে। এই যে পাতা শুকনো পাতার আসনটাতে। অনেক কালের ক্ষুৎপিপাসায় খুবই কাতর, বুঝতে পারছি। এই নে তবে, বেড়ে দিচ্ছি ভাতফোটানো দুঃখ-দানা। কষ্ট শাকের ভাজা দিলাম। গেলাস-ভরা অশ্রুকণা। বিগত দিনের সুখের টুকরো ঝোলে রেঁধেছি। স্মৃতির কাঁটা সরিয়ে খাবি।
তারপরে আর কীই বা আছে।
        কীই বা থাকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, বলার মতো।
        রইল একটা শীতের কাঁথা – স্মৃতির কাঁথা।
         শরৎমেঘের পেঁজা দুঃখ। রক্ত-ঝরা পলাশ-কুসুম হৃদয়খানা।
         এ-সব কিছুই মূল্যহীন আজ তোর দেরাজে। চাই না ও তোর, আমার থাক। তুই তো এখন ফিরেই যাবি... দূর বিদেশে... তেপান্তরে। সুখবালিকার আলিঙ্গনে।
        ইচ্ছে হলে, একটু ছুবি চোখে পাতা।
        ইচ্ছে হলে, ভিজিয়ে যাবি স্মৃতির কাঁথা।


দ্বারোন্দা, বীরভূম
৪ এপ্রিল,২০১৫