দড়জায় কড়া নাড়ছে এমন সময়


আমি: কে ? কে ? মিথিলা ভেতরে আসুন
আমি ভাবলাম বুঝি বা শিউলি
যদিও সে বলে গেছে আর আসবে না কোনদিন।
মিথিলা: কেন!  ঝগড়া হয়েছে বুঝি আবারো।
আমি: এসব নিয়েই তো বেঁচে আছি আজো
অভিমান বড় বেশি তার
বহুদিন আর আসেনা এদিকে
কাজ ছিলো নাকি খুব?
মিথিলা: কাজটাজ সব চিতায় তুলেছি, জানেন না তো
অনন্তের দেখা পেয়েছি সমুদ্র সৈকতে।
আমি: তাই নাকি! জানি না তো।
মিথিলা: ওসব কথা পড়ে হবে, আগে ক্ষমা চাই পাবো!
আমি: অপরাধটাই বা কি? আগে তো শুনি।
মিথিলা: আপনার নামে একটা চিঠি ছিলো
শিউলির লেখা দিন কয়েক আগে,
আমায় দিয়েছিলো আপনাকে পৌছে দিতে,
কিন্ত---আমি তো সেদিনই গেলাম সৈকতে
ফিরে এসে সোজা আপনার কাছে, ক্ষমা করেছেন তো!
আমি: তা নাহয় করলাম খানিক
কিন্ত--- চিঠিটা দিবেন তো!
মিথিলা: উহু হু এখন নয় সব শেষে যাবার আগে
তা না হলে আমি তো জানি
আমায় ভুলে চিঠিতে ডুবে যাবেন।
আমি: আচ্ছা বাবা ঠিক আছে ঠিক আছে
আপনার কথা বলুন শুনি, আসেননি কেন এর আগে।
মিথিলা: সংকোচে।
আমি: কেন?  সংকোচ কেন শুনি।
মিথিলা: কি এক দূর্বিনীত মোহে কিছুদিন,
জ্বালাতন করেছি আপনাকে,
অথচ আপনি বিরক্ত না হয়ে এতোটুকু,
শেখালেন ধীরে ধীরে, ভালোবাসা নয় কোন ফুলের বেসাতি,
অথবা তুলে রাখা বীজধান বিভিন্ন জমিনের,
এ শুধুই হৃদয়ের কাছের একান্তের একজনের,
একথা বুঝতেই মাথায় শিরায় তুমুল রক্তপাত,
লজ্জায় সংকোচে কুঁকড়ে গেলো ডালপালা,
শান্ত হতে গেলাম সাগরের কাছে সৈকতে,
সেখানেই দেখা অনন্তের সাথে।
আমি: মজা হলো বুঝি খুব, এতোদিন পরে!
মিথিলা: হু সেও খুব অভিমানি, শিউলির মতন,
শিউলি তো সেদিন কেঁদে কেঁদে একাকার,
শুধু তার একটাই কথা, কবিটাকে দেখিস,
কবিটাকে দেখিস, মিথিলা।
আচ্ছা!  কি হয়েছে শিউলির!
সেদিন মনে হলো খুব বিষন্ন আর এলোমেলো,
চিঠিটা দিয়েই ঝড়ঝড় চোখে শ্রাবণ।
আমি: আমিও তো দেখিনা কতোদিন,
কতোদিন ছটফট একা একা,
সেদিন যে চলে গেলো! এরপর আর যোগাযোগ নেই কোনো,
ওদিকে টেলিফোন ও মৃত বেশ কিছুদিন ধরে,
চিঠি পড়লেই বুঝি জানা যাবে সব কিছু।
মিথিলা: বুঝেছি,  তর সইছে না এতোটুকু, তাই নয়!
এই নিন চিঠি শিউলির,
যতো যাই হোক সে কিন্তু আপনাকে ভালোবাসে খুব,
আমি জানি।
আমি: তবে বড় বেশি অভিমানী।
মিথিলা: আজ যাই তবে।
আমি: কোথায়?
মিথিলা: অনন্তের কাছে, একেবারে।
আমি: শিউলি কি জানে?
মিথিলা: দেখা আর হলো কই তার সাথে
জানানোর ভার রইলো আপনারই কাছে
আশা করি ভালো থাকবেন সবকিছু নিয়ে, ঠিক আছে।
আমি: ঠিক আছে।


চিঠি খোলার পর শিউলি কি লিখেছে পড়তে শুরু করলাম।


কবি,
কবি আমার, এ চিঠি যখন পৌঁছে দিবে তোমার হাতে,
তোমারই মিথিলা, তখন আমি তোমার থেকে অনেক দূরে
অন্যলোকে, মৃত্যুর গাঙচিল পাখায় ভর করে, পৌঁছে যাবো
সেই অফুরন্ত বসন্তের দেশে, যেখানে হয়তোবা ভালোবাসারা ঘর বাঁধে ভালোবাসা দিয়ে, যদিও ভালোবাসা ছোট্ট অথচ একরোখা, চার অক্ষেরের এইশব্দে একান্তোই তোমারই অধিকার। তবে কেন জানি আজ বারবার মনে হয়  ভালোবেসেছি আমিও। জন্মথেকে আজকের এই স্বেচ্ছা মৃত্যু অবধি, মরণ তো আমার সেদিনই হয়েছে কবি। যেদিন তোমায় নিঃসঙ্গ করে গড়েছি নিবাস বাস বৃত্তের সাথে এই চন্দ্রালোকে। তারপর তুমি পূর্ণিমা কিংবা বরিসনে রাতে চেয়ে থেকে থেকে এবাড়ির জানালার সার্শিতে ছুটে গিয়ে ক্ষনে ক্ষনে নদীর তীরে আমায় করেছো আরো রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত, লাসের শরিরে বিঁষনুন দিয়েছো গুঁজে। তোমার এই ভালোবাসা প্রবল বর্ষার মতন পলে পলে এফোঁড় ওফোঁড় করেছে শিউলির শরির। তুমি জনতেও পারনি, আসলে ভালোবাসা বাসি যাই বলো কবি, সবকিছুই বুঝি নিজের নিজের।  পাশাপাশি একই বালিসে মাথা রেখে কেউ কি পারে?  স্বপ্ন দেখাতে নিজেরটুকু অন্যকে তুমিও কি পারো? তোমারই স্বপ্নে অথবা স্বপ্নের ভীতরেও যে স্বপ্ন তাতে টেনে নিতে অন্যকে পারোনা আমিও পারিনি। তাই, তোমারটুকু শুধু তোমারই রয়ে গেছে আর আমারটুক শুধুই
আমার, এটাই বুঝি বাস্তব যার যার তার তার। কেমন দেখতে সেই বাস্তব কবি, সে কি কোন দীর্ঘশ্বাস নাকি একা একা ভালোবেসে যাওয়া কোন নিঃসঙ্গ নিশাচর পাখি তারই উত্তরে আজ দিয়েছি উড়াল মৃত্যুর লেমাট সাগরে। কবি,
মিথিলার সাথে আমিই চেয়েছি কোন সম্পর্ক তৈরি হোক তোমার, তাতে অন্তত ভলো থাকবে তুমি। গড়ে নিবে আবারও তোমার সেই মায়াবী শীষমেহেল,  কিন্তু যখনই কুঁড়ি ফুটলো ফুল ফুটলো তোমাদের, কেন জানিনা মনে হলো কি আর হবে এই ভালোবাসাহীন বেঁচে থেকে, এতোদিন যতোদূরেই থাকিনা কেন তোমার কাছ থেকে মনে হতো তোমার ভালোবাসা এক সুগন্ধি হয়ে ঘিরে আছে চারপাশ গর্ব হতো খুব নিজেকে নিয়ে অথচ আজ কিনা নদী ভাঙা পথের ভিখিরি।  যে জীবন কাটিয়েছি ভালেবাসা পেয়ে পেয়ে যেখানে অধিকার ছিলো শুধুই আমার আজ সেখানে ছায়াপাত মিথিলার।  তবে আমি কি নিয়ে বাঁচি বলোতো কবি! তাই সরে যাওয়া চিরতরে ভালো থেকো কবি আর মাঝে মাঝে ফুলসজ্জা রাতে সেই নদির কানে গুঁজে দিও লাল পলাশের কানপাশা, আমার নামে অনুরোধ শুধু এইটুকুই।
ইতি
আমৃত্যু প্রশ্রয়ধন্য শিউলি।