প্রতি দিনই বিকেল আসতো আমার উঠোনে।
বিকেলগুলো কখনো আসতো শরতের আকাশ নিয়ে
কখনোবা চোখে বুলিয়ে দিত শুভ্র কাশফুলের নরম ছোঁয়া
রংধনু্ও মাঝে মাঝে উঁকি দিতো নি:শব্দে……
আকাশটা থাকতো নীল-সাদায় আচ্ছাদিত।


বিকেলের আকাশে উড়ে বেড়াতো সাদা কপোতরা
সাদা মেঘের দল আর কপোত মিলেমিশে হতো একাকার,
বিকেল আকাশের কখনো মন খারাপ হতো না, শুধু আমার জন্য;
কখনো মিষ্টি বাতাসের ঘ্রানে আমাকে মাতাল করে দিতো বিকেল।


উঠোনের এক পাশে ছিলো বড় পুকুর; আর অসংখ্য তালগাছ…
তালগাছের ছায়া পুকুরে গিয়ে পড়ত;
আধো আলো-ছায়ার প্রাকৃতিক আয়নায় দেখতাম
পালিত পোনাদের ডুব সাঁতার
আর সে জলে উঁকি দিলেই ভেসে উঠত সাদামেঘ নীলাকাশ….
মুখ বাড়ালেই দীঘির বুকে ভেসে বেড়াতাম আমি।


সব মুহুর্তগুলোই ছিল শুধু আমার।
অফুরন্ত সময় ছিলো যখন, পাশে ছিলো না কেউ;
কত স্বপ্ন দিয়ে সাজাতাম বিকেলগুলো;
একেকটা বিকেলকে স্মরণীয় রাখার জন্য কতই বাহানা খোঁজা…
কল্পনার নীলে ভেসে ভেসে সাদা মেঘ কুঁড়িয়ে,
ঘরের ছাউনি বানিয়ে, আকাশের নীল এনে রাঙ্গিয়ে দিতাম দেয়াল,
বিছানায় শুয়ে ভাবতাম, ছাদের শ্বেত পবিত্র রংয়ে আলতো ছোঁয়ায় যদি
মাঝে মাঝে দু এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে
চোখের পাতায়; তবে কেমন হবে!


কেউ পাশে থেকে আংগুলের ডগায় নিয়ে আসতো
মুক্তো শুদ্ধ ফোঁটাগুলো…….. এনে বলতো,
এই নাও দুটো মুক্তো দুকানে পড়ে নাও,
দেখিতো কেমন লাগে!


কোন এক বিকেলে, কে তুমি অদৃশ্য হয়ে পাশে ছিলে!
সবুজ ধানের ক্ষেতের আল দিয়ে হেঁটেছিলে হাতে হাত রেখে
কখন যে হাত ছেড়ে চলে গেলে বুঝে উঠতে পারিনি,
তখন গোধূলী বেলা পেরিয়ে সন্ধ্যার ছায়া ধানক্ষেতে!
অদৃশ্য ছিলে বলে আজো চিনে উঠতে পারিনি। কে তুমি ভালবাসো!


হয়তো আমাকে ভালবাসবে এমন কেউ ধরায় আসেই নি!
আজও বিকেল আসে, কিন্তু আমার জন্য কিছুই নিয়ে আসে না,
রিক্ত হাতে এসে কিছুক্ষণ পাশে থেকে নিরবে চলে যায়;
আজও পাশে থাকে না কেউ;
শুকনো কাশফুল বাতাসে উড়ে উড়ে চুলে ঠাঁই পায়…
আংগুলের ডগায় নিয়ে এসে কেউ বলে না…
তোমায় চোখে ফুলের পরশ বুলিয়ে দিলাম,
চোখ বন্ধ করলেই আমায় পাবে তোমার স্পর্শে, অনুভবে।
বিকেলগুলো এভাবেই ঝরে যায় আজ অকালে।