হে প্রভু!
নিজের তরে চেয়েছি কি কভু?
তোমার দুয়ারে দু'হাত তুলে?
জীবনটা আমার সাজিয়ে দিও ফুলে ফুলে?        
         আমিতো চেয়েছি সারাজীবন
সুন্দর-সুখময় দেখতে সকলের মন।
তবুও পূর্ণ করনি আশ!
   সতত করেছ নিরাশ!


এখন‌ও দেখি- ষাঁড়ের মতো কিছু ছেলে  
                              জন্মদাত্রীকে ফেলে
জয় করতে সুন্দরী বধূর মন
                   ছিন্ন করে বন্ধন
ভিন্ন হয়ে করে নতুন জীবনের সূচনা!
পক্ষান্তরে,নিত্য ভোরে
বিত্তবানের দোরে দোরে
প্যাটের দায়ে নিরুপায়ে
ভিক্ষার থালা খানি লয়ে ঘোরে
অশীতিপর বৃদ্ধা জনম দুঃখিনী মা!


বন্ধু-বান্ধবের আড্ডা-জলসায়
                     পানির মতো হায়
                 কত যে অর্থকড়ি
স্বর্ণ-রৌপ্যের মানে ভরি-ভরি
নিমেষেই লুটে নেয় প্রফুল্ল-পুলকিত-হর্ষিত
সময়ের থাবা!
যেখানে জীবন যুদ্ধে
ভাগ্যের প্রতি ক্রুদ্ধে
ক্লান্ত -শ্রান্ত এক পরাজিত সৈনিক-
দৈনিক দু'বেলা দু'মুঠো-
রিজিক জুটানোর আশায়
                   শরীর ভাসায়
মাথার ঘর্মে,সৎ কর্মে
রিকশাওয়ালা কিংবা কুলি-মজুর অসহায় বাবা!


এখনও দেখি-বিত্ত-বিভবের মাঝে      
                      সকাল-দুপুর-সাঝে
প্রাসাদপ্রতিম বাড়িতে
    বাতানুকূল গাড়িতে
বিপক্ষতায় উন্মাদ হয়ে যায়-
ভালো থাকতে ভালো রাখতে-
রোজ রোজ রকমারি স্বাদের ভোজ
যত্ন-স্নেহের ত্রুটিহীন ইস্যু!
          যেন আদরের শিশু-
বিদ্যা-জ্ঞানে হয়ে উঠে মহামতি যিশু
পৃথিবীতে করতে নতুন প্রাণ দান।


কোনো রূপকথার গল্প না
নয় কবির অলিক কল্পনা
              নয় মোটে মেকি
          চমকে উঠি সে কী!
শীত-গরমের প্রাবল্যতায়
জীবন যখন যায় যায় অবস্থায়
তখনও দেখি-নগ্ন পায়
         জীর্ণ-শীর্ণ দশায়
ময়লা-ছেঁড়া বস্ত্র গায়
ভগ্ন মনে প্রকৃতির সনে
যুদ্ধ করে পার করে রাত
      আসবে নতুন প্রভাত- এ আশে
ব্রিজ-কালভার্টের নিচে ফুটপাতের পাশে
বিলাসী জীবনের স্বপ্নহীন আঁখিতে
                          অদৃষ্টের ফাঁকিতে
পিতা-মাতার সোহাগ বঞ্চিত কত সন্তান!


       শিক্ষা-সভ্যতায় ছুঁয়েছে দুলোক্
তবু উন্নত হয়নি মানব-হৃদয়-ভুলোক্!
আজো পুষ্ট হয়নি বিবেক-মন!
মনুষ্যত্ব,নৈতিক মূল্যবোধ!
  ক্রমাগত বাড়ছেই ক্রোধ!
মানুষ এখন‌ বেইমান
       নিভু নিভু ঈমান
হিংস্র,স্বার্থপর,বড্ড প্রতিশোধপরায়ণ!
           নুন খায়,গায় না আর গুণ
অতি তুচ্ছ স্বার্থে হয় সহোদর খুন!
নির্বাসিত প্রেম-প্রীতি,দয়া-মায়া
মানুষরূপী সব শয়তানের কায়া!
অপদার্থ নর্দমার কীটের মতোন
সমাজের কিছু আগাছা-পয়জন
                                  নিশি-দিন-
করছে এ সুন্দর বসুন্ধরাকেই নিরাপত্তাহীন!


              ফাগুনের আগুনে ভস্মিত হয়ে
বুক ভরা বিশ্বাস,চোখ ভরা আশ্বাস লয়ে
প্রেমিকের কাছে দিচ্ছে সঁপে মহামূল্যবান ফুল!  
               যখন ভেঙ্গে যায় ভুল
কলঙ্কিনী হয়ে পায় না তো কূল!
সকল স্বপ্ন হয়ে যায় জল
   বুনো জানোয়ারের দল-
কখনো কখনো দেখি-নদীর পাড়ে
    বিজন ভূমি কিংবা ঝোপ-ঝাড়ে -
ফেলে আসে ক্ষত-বিক্ষত বস্তা বন্দি কোনো যুবতী          
         বোনের বেওয়ারিশ লাশ!
   এটাই সময়ের নির্মম ইতিহাস!


এখন‌ও দেখি-ভোটের আগে,আনতে বাগে
জনতার মন,
একান্ত আপন হয়ে হাত-পা ছুঁয়ে      
                        কদমবুসির কত তামাশা!
        সব লোক দেখানো!সব ভাসা ভাসা!
বিজয়ের পরে
কাঠের চশমা পড়ে-
নেতা হয়ে উঠে বিপুল ক্ষমতাধর
                  জনগণের নষ্ট ঈশ্বর!
চরিত্রের মূলনীতি
দাফন করে ন্যায়-নীতি
           সীমাহীন দুর্নীতি -
    আর ভোগ-লালসায়
নিজের চৌদ্দ গুষ্টির ভাগ্য বদলায়!
     ওদিকে ছল-চাতুরীর ফাঁদে
গভীর খাদে পড়ে জনতা কাঁদে
                         ভারি হয় কাঁধে-
                        ঋণের বোঝা দিন দিন
দু'চক্ষে দেখে প্রগাঢ় অমানিশা অন্তহীন!


এখনও দেখি-পড়াশোনার পাঠ চুকে
                             নীরবে ধুঁকে ধুঁকে
কত মেধাবী তরুণ হতাশায় ভোগে
রোগে-শোকে রুদ্ধ হয়ে আসে দম
       কখন জানি দাঁড়ায় এসে যম!
সংকীর্ণ হয়ে আসে সম্মুখ পথ
ক্ষীণ হয়ে আসে হায়াত,সাথ উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ!
      তবুও সে ছোটে -
যদি কপালে জোটে
একটি ভালো চাকরি ।- 'এ আশায়
    কপাল তলার জলে বুক ভাসায়
কত জোড়া জুতার তলা যে করে ফেলে ক্ষয়!
হায় বিধি বাম!ভাগ্য না হয় সহায়
উৎকোচ-উপঢৌকন,মামা-খালু বিনে!
দিনে দিনে বেকারত্বের কাছে হারে!
আপনার প্রতি তার ঘৃণা আর ধিক্কার‌ শুধু বাড়ে।
তখন মনে হয় -
কেন উন্নত জীবনের স্বপ্নে বাবা-মা'র
অর্থসম্পদ করেছে অপচয়!


এখন‌ও দেখি-দেশে দেশে কত বীর
নিজ ভূমেই পরবাসী যেন মুসাফির!
অনেক দিয়েছে ছাড়
আর কত খাবে মার?
এখন সময় হয়েছে রুখে দাঁড়াবার।
জননী-জন্মভূমির তরে
            প্রাণপণে লড়ে
    হাসতে হাসতে করে -
শাহাদাতের পেয়ালা পান।
         শয়তান,নাফারমান
           জালিম দখলদার-
  বাড়াতেই থাকে বারবার
অত্যাচারের স্টিমরোলার!
পরাশক্তি সব দেশ
       এক হয়ে বেশ
পাখির পেট থেকে ফেলে বোমা!
গর্ভের শিশু-ও ভয়ে কাঁপে ও মা!
বাড়িঘর বরবাদ,যেন মৃত্যুপুরী ফাঁদ!
চিকিৎসা কেন্দ্র,উপাসনা গৃহ যায়নি কিছুই বাদ!
নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও বিভৎসতায়!
হাজার হাজার নিরীহ নিষ্পাপ শিশুর-
   রক্ত মেখে দেয় শতাব্দীর গায়!
সময়ের সাক্ষী একুশ শতক
লিপিবদ্ধ চিশতীর কবিতায়।
              অভাবের তাড়নায়
পশুর খাদ্য ভাগাভাগি করে খায়!
        নিপীড়িত মানুষের বেদনায়-
আকাশ- বাতাস হয়ে উঠে ভারী
   তবুও সর্বহারাদের আহাজারি
শোনে না কোনো কালা-ক্ষমতালোভী শালা!
কেবল তীব্র নিন্দা প্রস্তাবেই করে ওরা-
                                        কান ঝালাপালা!


এখনও অনেক ব্যথা,অনেক কথা
রয়ে গেছে জমা
বলতে পারিনি সব
বন্ধু আমায় করে দিও ক্ষমা।
বুকের ভেতর জ্বলছে অনল
                  দুই চক্ষু ছলছল!
বলতে পারো কেউ?
এই যে সকল!
কোন সে পাপের ফসল?


চুপ কেন হে বিশ্ব বিধাতা পাচ্ছ বুঝি লাজ?
তোমার বান্দার হৃদয়েই যদি-নেমে আসে শোক!
স্রষ্টা হয়ে তুমি কেন নিরব দর্শক?
এ প্রশ্ন রেখে গেলাম আজ।।