এস-গ্রাম বাংলার, দুটি কিশোর কিশোরীর-
প্রানের গল্প বলি ;
গ্রামখানি তারা –সদা রাখিত ভরিয়া ,
আনন্দ হিল্লোল তুলী।
কোন এক বসন্তের শেষে , ঝড় হাওয়া এসে –
কোথায় উড়ায়ে নিল ;
ওদের প্রানের কথা , শেষ হলো হেথা ,
হৃদয় ভাঙ্গিয়া দিল ।
কেটে গেছে কত সুমধুর দিন ,
বাজে না তো আর হৃদয়ের বীণ ,
দেহ ছেড়ে প্রাণ গেছে চলে দূরে ;
জানিত কি তারা ?
মধুময় দিন হয়ে যাবে হারা !
দোহার, জীবন-বাঁশরীর সুরে ।
জীবনের তালে , লেখা ছিল ভালে ,
জানিত না ওরা কেউ ;
যৌবন থেকে , পথ গেল বেঁকে ,
জীবনে তুলিয়া ঢেউ ।
গ্রামের দুটি পরিবার ,যাদের খোলা ছিল দ্বার,
দুটি অবোধ শিশুর তরে ;
ওরা এলো কাছাকাছি ,কাটাত সময় করে নাচানাচি ,
হৃদয় বীণার সুরে ।
ওরা চলিত ছন্দে , প্রানের আনন্দে ,
তুলিয়া খুশীর ঢেউ ;
ঐ শিশু দুটি , ছিল ফুল হয়ে ফুটি ,
ওদের তরে দুঃখ পেতনা কেউ ।
কালের গতিতে , জীবন মথিতে ,
দোহে শৈশব ছাড়ি ;
জীবণ স্রোতে , নতুন ব্রতে ,
কৈশোরে দিল পাড়ি ।
বন্ধ খাঁচায় , শেখানো ভাষায় ,
আর ধারিয়া রাখিতে নারে ;
প্রানের জোয়ার , হলো ভরভর ,
কে আর ? বাঁধিয়া রাখিতে পারে ।
চঞ্চল পায়ে , যায় ওরে ধেয়ে ,
কিশোর কিশোরী দুটি ;
বন্ধন হারা , প্রাণের ধারা ,
চলিত অবাধে ছুটি ।
পাতায় পাতায় , ব্যঞ্জন দোলায় ,
দক্ষিণা মলয় বাঁধিছে বোল ;
বৈশাখ মাসে , দুটি প্রাণ হাসে ,
আম্র শাখায় খেয়ে দোল ।
শাখায় শাখায় , বোশেখী হাওয়ায় ,
মর্মর ধ্বনি তুলি ;
কাল বৈশাখী , আসিছে ছুটি ,
পরানে আবেগ মেলি ।
ঝড় ঝঞ্ঝায় , পাগলের প্রায় ,
আম্র কুড়ায়ে সুখ ;
দুটি প্রাণ , যেন দুটি গান ,
আমোদে ভাসাত বুক ।
বৃষ্টিতে ভিজি , ভেজা কাক সাজি ,
ফিরিত গৃহ বাটে ;
মায়ের বকুনি , শীতের কাঁপুনি ,
সবই চলে যেত মাঠে ।
দিনের ক্লান্তি , আনিত শ্রান্তি ,
প্রভাত বেলার আলো ;
রাতের বিচ্ছেদ , করিয়া উচ্ছেদ ,
মিলন বেলায় হৃদয় ভরিয়া গেল ।
ওরা তো জানেনা , পরানে মানে না ,
কাছেতে না এলে কারও ;
দুঃখ বেদনা , মর্মের যাতনা ,
হৃদয় ভরায় আরও ।
মাস আষাঢ় , করিত অসাড় ,
সমস্ত গ্রাম্য জীবন ;
বৃষ্টির ধারা , দিত প্রাণে নাড়া ,
আগুন দ্বিগুন করে যেমন পবন ।
বৃষ্টিতে ভিজে , আনন্দ কি যে ,
কাটেনা ওদের মনের ঘোর ;
যারা দেখিত , শুধুই ভাবিত ,
পূর্ব জনমের এ দুটির জোড় ।
শ্রাবণের ধারা , প্রানের বারা ,
কেহ নাহি যেত মাঠে ;
ওরা দুইজন , হয়ে একমন ,
ছুটিয়া চলিত বাটে ।
থৈ থৈ জল , করে টলমল ,
শরৎ এসেছে দ্বারে ;
নিখিলের শোভা , মনলোভা প্রভা ,
দেখিনিত কভূ আরে ।
সবুজ ধান্য , দেখিতে অনন্য ,
ভাসিছে জলের বুকে ;
মারাল মরালী , করে জলকেলি ,
নাচে যে হৃদয় সুখে ।
পূজার সুর , বাজিছে মধুর ,
দ্বয়ীত জীবণের আশে ;
হেমন্তের আলো , লাগে যে ভালো ,
শিশির ভেজা ঘাসে ।
শীতের হাওয়ায় , কাঁপন লাগায় ,
ৠতুর গতি যে তাই ;
হাতে হাত ধরি , ভাসায়ে প্রানের তরী ,
ওরা ভেসে যায় ।
বসন্তের আগমনে, মনের জাগরণে ,
কোকিলের কুহু কুহু রব ;
শাশ্বত জীবন ধারা , দুটি প্রাণে দেয় নাড়া ,
মোহময় জীবনের এইতো সব ।
১৬/০১/১৯৯৪,
রবিবার, শিলবারি,
আসাম।